কীটনাশকে ভেজালের অভিযোগ

হঠাৎ মরে গেছে ৫০ বিঘা জমির আলুগাছ

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড়াবাড়ী গ্রামে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরে খেতের আলুগাছ মরে যাওয়ায় হতাশ কৃষক। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দু'টি গ্রামের প্রায় ৫০ বিঘা জমির আলুগাছ হঠাৎ মরে গেছে। কৃষকের অভিযোগ, কীটনাশক স্প্রে করার পরে গাছগুলো মারা গেছে।

ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ৭ কৃষক।

কমলাবাড়ী ও বড়াবাড়ী গ্রামের কৃষকরা জানান, তারা ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলাররে পরামর্শে মেনকোজেব কীটনাশক স্প্রে করেছিলেন। এর দু'দিন পর থেকে আলুগাছের পাতা মরে যেতে শুরু করে। তারা যোগাযোগ করলে ওই কোম্পানির প্রতিনিধি তাদের উৎপাদিত অন্য একটি ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেন কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বড়াবাড়ী গ্রামে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করার পরে খেতের আলুগাছ মরে যাওয়ায় হতাশ কৃষক। ছবি: সংগৃহীত

বড়াবাড়ী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৭০ শতাংশ জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম। এতে আমার প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের ডিলার কামাল হোসেনের পরামর্শে মেনকোজেব কীটনাশক স্প্রে করার দু'দিন পরে গাছের পাতা পুড়ে মরে যেতে শুরু করে।'

'কামাল হোসেনের পরামর্শে তাদের কোম্পানির অন্য কীটনাশক স্প্রে করছি কিন্তু গাছ বাঁচেনি। পরে বুঝতে পেরেছি, কীটনাশকে ভেজাল ছিল,' তিনি বলেন।

জামাল উদ্দিন আরও বলেন, 'এখন ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা পাত্তাই দিচ্ছে না।'

একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কীটনাশকের প্যাকেটে মূল্য লেখা ছিল ১ হাজার ৮০ টাকা লেখা। তবে আমরা কিনেছি ৭৫০ টাকা দরে। কম দামে পাওয়ায় আমরা ওই কোম্পানির কীটনাশক ওষুধ কিনেছিলাম। গাছ মরে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছি কীটনাশকে ভেজাল ছিল।'

কমলাবাড়ী গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন জানান, মেনকোজেব কীটনাশক স্প্রে করার দু'দিন পরে তার ১২ বিঘা জমির আলুগাছ মরে গেছে। আরও অন্তত ১০ কৃষকের একই অবস্থা হয়েছে।

ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

কীটনাশকে ভেজাল থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানির ডিলার কামাল হোসেন বলেন, 'মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে এ রকমটি হয়েছে। কীটনাশক ভেজাল নয়। কৃষকদের অসচেতনতায় এই ক্ষতি হয়েছে।'

ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের লালমনিরহাট প্রতিনিধি এনামুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আলুখেত পরিদর্শন করেছি। আমাদের কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করে এই সমস্যা হয়নি।'

পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'কৃষকরা মিশ্র (একাধিক) কোম্পানির কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করেছেন। আমাদের কোম্পানির কীটনাশক ভেজাল নয়।'

যোগাযোগ করা হলে আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে আলুখেত পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেড উৎপাদিত মেনকোজেব কীটনাশক বাজারজাতের অনুমতি রয়েছে, কোম্পানির নিবন্ধনও রয়েছে বলে জানান ফারুক।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank allows paying foreign university fees

Banking reform roadmap crucial for stability, confidence

Financial sector's future hinges on effective execution of three-year reform

3h ago