নিষিদ্ধ, তবুও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে কার্বোফুরান

নিষিদ্ধ সত্ত্বেও প্রকা
কার্বোফুরান। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বছর বিষাক্ত কীটনাশক কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু যথাযথ নজরদারির অভাবে এখনো সারাদেশে প্রকাশ্যেই এই কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি কাজে বহুল ব্যবহৃত কার্বোফুরান প্রথম নিষিদ্ধ করা হয় গত বছরের ৩০ জুন। এরপর আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

কার্বোফুরানের বিষাক্ততা মানব স্বাস্থ্য ও আবাদযোগ্য জমির উর্বরতা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ২০১৬ সালে তা নিষিদ্ধের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করা ৮৮তম দেশ হয় বাংলাদেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মারা যায় এবং এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া।

কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক পরিচালক নুরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কার্বোফুরানের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মাটির উর্বরতা কমতেই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিজমিতে কার্বোফুরান ব্যবহারের পর ৩০ দিন পর্যন্ত ফসল বিষাক্ত থাকে।

গত মাসে মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঢাকা ও মানিকগঞ্জসহ ১০টি জেলার এক ডজন দোকান ঘুরে দ্য ডেইলি স্টার দেখেছে, এখনো কৃষকদের কাছে কার্বোফুরান বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটও নিষিদ্ধ কীটনাশক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্রি করছে।

গত ২০ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের ধলাগাঁও বাজারের বরকত বীজ ভান্ডার দোকান থেকে কার্বোফুরান কিনতে দেখা গেছে কৃষকদের।

ক্রেতা পরিচয়ে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক কার্বোফুরানের কথা জানতে চাইলে দোকান মালিক বরকত হোসেন বলেন, 'করবেল কোম্পানি'র এক কেজি 'কার্বোফুরান-৫জি'র দাম পড়বে ১৬০ টাকা। এটি কার্যকরভাবে বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ওপর কাজ করে।

আরেক কীটনাশক দোকানের মালিক রুবেল মোল্লা জানান, তার কাছে তিনটি ভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০ কেজি কার্বোফুরান মজুত রয়েছে।

রুবেল প্রতিবেদককে জিজ্ঞেস করেন, 'আপনার কোন ব্র্যান্ডেরটা প্রয়োজন?'

মুন্সিগঞ্জের মুন্সিরহাট, ধলাগাঁও, বালিগাও বাজারের আটটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সবাই প্রকাশ্যে কার্বোফুরান বিক্রি করছে। বাজারগুলোতে ব্যবহার নিষিদ্ধ সংক্রান্ত কোনো ব্যানার, পোস্টার দেখা যায়নি।

সুনামগঞ্জের জাওয়া বাজারের খান এন্টারপ্রাইজের মালিক ইদ্রিস আলী জানান, ম্যাকডোনাল্ড ব্র্যান্ডের ৭০ কেজি কার্বোফুরান তার কাছে মজুত রয়েছে।

তিনি বলেন, 'সরকার নিষিদ্ধ করেছে, তাই মজুত কম। তবে বেশি চাহিদা থাকলে বেশি সরবরাহ করতে পারব।'

জানতে চাইলে করবেল কেমিক্যালস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আদম আলী বলেন, 'আমাদের কাছে কোনো মজুত নেই। কিছু দোকানে আমাদের পণ্য (কার্বোফুরান) থাকতে পারে।'

ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ (প্রা.) লিমিটেডের হেড অব সেলস, মার্কেটিং অ্যান্ড বিজনেস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, 'কারও কাছে যদি একটি বা দুটি প্যাকেট থাকে, তবে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে।'

এদিকে, একটি ই-কমার্স শপ চালানো আরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি কার্বোফুরানসহ কৃষি পণ্যের হোম ডেলিভারি দিয়ে থাকেন।

'আমরা খুচরা পর্যায়ে কার্বোফুরান বিক্রি করি। আমরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দেশের যেকোনো স্থানে পণ্য পাঠাই', বলেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২৫২টি প্রতিষ্ঠান কার্বোফুরান আমদানি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রি করে।

কীটনাশক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (পিটাক) তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তিন হাজার ২৮৫ টন কার্বোফুরান মজুত ছিল।

যেসব কোম্পানির কাছে কার্বোফুরান আছে, তাদের গত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব ধ্বংস করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল পিটাক।

অন্যথায় কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিষিদ্ধ-পরবর্তী বিক্রি, তদারকি বা বন্ধ করতে কোথাও কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

এদিকে, জেলাজুড়ে কৃষকরাও সচেতনতার অভাবে কার্বোফুরান ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ সদরের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, পোকামাকড় প্রতিরোধে তিনি তার আলু খেতে সম্প্রতি কার্বোফুরান স্প্রে করেছেন।

'নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা আমাদের অবহিত করেননি', বলেন তিনি।

একই ভাষ্য ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলামেরও। তিনি পেঁয়াজের বীজ চাষের সময় ওই জমিতে কার্বোফুরান ব্যবহার করেছেন।

মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুল করিম ডেইলি স্টারকে জানান, নিষিদ্ধ কীটনাশক কার্বোফুরানের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য মন্ত্রণালয় বা উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং থেকে তারা কোনো নির্দেশনা পাননি।

তবে জেলায় কার্বোফুরান বিক্রি হওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (বালাইনাশক প্রশাসন ও মাননিয়ন্ত্রণ) ও পিটাক কমিটির সদস্য সচিব ফরিদুল হাসান বলেন, কেউ কার্বোফুরান বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর জন্য বাজেট দরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

3h ago