ব্রহ্মপুত্রে অসময়ে ভাঙন: ১ মাসে নদীগর্ভে ২ শতাধিক বাড়ি

নদী ভাঙন
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর ভাঙছে ব্রহ্মপুত্র নদ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে দুর্গম পোড়ার চরের বাসিন্দা আসিয়া বেওয়া (৬৭)। তার চোখে-মুখে বেদনার। এক বছর আগে এই চরে বসবাস শুরু করে তার পরিবার। সংসারে ২ ছেলে, তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ ৮ জন। পোড়ার চরে দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন।

গত ১ মাসে এই চরে ১০ বাড়ি ও ১০০ বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আসিয়ার বাড়িও ভাঙন হুমকিতে।

আসিয়া বেওয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাঝের চরে ১০ বিঘা আবাদি জমি ছিল। বসতভিটাও ছিল। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সবকিছুই চলে গেছে। মাঝের চর ছেড়ে এক বছর আগে আশ্রয় নিয়েছি পোড়ার চরে। এখানেও ভাঙন। এবার ভাঙলে নতুন করে ঘর তোলা খুবই কষ্টের হবে।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের আসিয়া বেওয়ার মতোই এখন শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এক চর থেকে আরেক চরে বসতভিটা সরিয়ে ক্লান্ত তারা।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতি চর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে বসতভিটা ও ২ বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। ২ বিঘা জমি আবাদ করে সংসার চালাতাম। এর আগে আরও ৩ বার বসতভিটা হারিয়েছি।'

নদী ভাঙন
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত চরবাসী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

এই চরের কৃষক দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক মাসে ভগবতি চরের ২০০ বিঘার বেশি আবাদি জমি ও ২০ বসতভিটা ভাঙনে পড়ে। নদী ভাঙার কারণে প্রায়ই ঠিকানা বদলাতে হয়। আয়ের টাকা খরচ হয়ে যায়। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বের হতে পারছি না।'

ধৈখাওয়ার চর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৫ বছর ধরে এখানে ২ শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। গত এক মাস আগে ভাঙন দেখা দেয়। প্রতি দিন বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।'

আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এই চরটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র ডেইলি স্টারকে জানায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বুকে প্রায় ৪০০ চর আছে। প্রত্যেক চরে ১০০-৩০০ পরিবার বাস করছে। কৃষিকাজ তাদের আয়ের প্রধান উৎস। এসব চরের অধিকাংশই দুর্গম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীভাঙন নিয়মিত বিষয়। চর ভেঙে নতুন চর সৃষ্টি হচ্ছে। চরের মানুষ এক চর থেকে আরেক চরে বসত বদলাতে অভ্যস্ত।'

'চরাঞ্চলে ভাঙন ঠেকাতে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয় না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তবে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর রক্ষায় সরকারের বরাদ্দ আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদের বেশ কয়েকটি স্থানে তীর রক্ষার কাজ করছে।'

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বুকে প্রায় ৪০০ চরের মধ্যে ৪০-৪৫ চরে ভাঙনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার।

তিনি বলেন, 'এসব চরে গত এক মাসে ২ শতাধিক বসতভিটা ও ৫০০ বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তা বিতরণ চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials end strike after govt warning

Following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders, officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown.

7h ago