টাঙ্গাইলে আবারও যমুনার ভাঙন, নদীগর্ভে বাড়িঘর-স্থাপনা

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের
টাঙ্গাইলে আবারও যমুনার ভাঙন, নদীগর্ভে বাড়িঘর-স্থাপনা
বসত ভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। ছবি: মির্জা শাকিল/স্টার

টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। বসত ভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। 

দুমাস আগে পানি বাড়তে শুরু করার পর এখন পর্যন্ত জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, সদর ও নাগরপুর উপজেলার কয়েক শ বাড়িঘর, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।  

গত কয়েকদিনে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫-৬ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙনের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেছে স্থানীয়রা। 

ইতোমধ্যেই যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তারা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি আশ্রয় নিচ্ছেন।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শুধু এ বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, নিকরাইণ, অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যমুনার ভাঙন চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ওই এলাকার ভাঙন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

এ বছর ভাঙন শুরু হওয়ার পর এলাকাবাসীর দাবির মুখে শেষ মুহূর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড দুএকটি জায়গায় কিছু জিও ব্যাগ ফেললেও তা ভাঙন প্রতিরোধে তেমন কার্যকর হয়নি। অপরদিকে নিজেদের এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধসহ নানাভাবে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। 

সম্প্রতিকালে গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে যমুনার তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা গ্রামের অনেক মানুষ তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। 

স্থানীয়দের দাবি, গত ২ মাসে শুধু এসব এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

পাটিতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আ. করিম, মিনহাজ মিয়া, নাসির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আমরা খুব অসহায় অবস্থায় আছি। চোখের সামনে বাড়িঘর নদীতে চলে যাচ্ছে। অনেকের কোথাও যাওয়ার মতো জায়গাও নেই। 

তারা বলেন, 'আমরা ত্রাণ চাইনি। আমরা আসলে একটি স্থায়ী বাঁধের আশায় পথ চেয়ে ছিলাম। কিন্তু নদী আমাদের সর্বস্ব গিলে নিচ্ছে। আর কবে বাঁধ হবে?'

গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি তিনি স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'শুনেছি আগামী বছরের মাঝামাঝি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে।'

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা বিনতে আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ শ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়া ও ভালকুটিয়াসহ কয়েকটি স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে।  

যোগাযোগ করা হলে, টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবে গোবিন্দাসী থেকে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় সিসি-ব্লক দিয়ে নদীপাড় বেঁধে দিতে এবং নদীর গতিপথ এদিক থেকে কিছুটা সরিয়ে দিতে কাছাকাছি একটি ক্রসবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, 'এখানে যেহেতু একটি অর্থনেতিক অঞ্চল (ইকোনোমিক জোন) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি রক্ষার জন্য হলেও যতদ্রুত সম্ভব এখানে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।'
 

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

4h ago