সুন্দরবনের ৩ নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক: ঝুঁকিতে মাছ ও মানুষ

সমুদ্রের গভীরতা থেকে আর্কটিক বরফ পর্যন্ত সর্বত্র প্লাস্টিকের ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং সুন্দরবন এর ব্যতিক্রম হবে বলে আশা করা যায় না।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের ৩টি প্রধান নদী থেকে অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও ৩ প্রজাতির শেলফিশ মাইক্রোপ্লাস্টিকে সংক্রমিত।

৫ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের প্লাস্টিকের টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। মাছ বা শেলফিশ সহজেই এটি গিলে ফেলতে পারে। এতে সবশেষে প্লাস্টিক কণাগুলো মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। ফলে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।

গবেষণায় ওই ২০ প্রজাতির মাছের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি সর্বাধিক পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩ থেকে ২০৫ দশমিক ৬১ কণা। পেশিতে এর পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ থেকে ৫৪ দশমিক ৩০ কণা।

দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি ২০২২ সালের অক্টোবরে 'সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট' জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুলিপি বিশ্লেষণ করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ফুড সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল অ্যানালিটিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং ব্রাজিলের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই গবেষণাটি করেছে।

গবেষণার জন্য ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি গাইডলাইন অনুযায়ী পশুর, রূপসা ও মংলা নদী থেকে ২০ প্রজাতির ১৪১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

যেসব প্রজাতির মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— বোম্বে ডাক (লোইট্টা), বেঙ্গল ইয়েলোফিন সি ব্রিম (দাতিনা), স্পেকলড শ্রিম্প (হরিনা চিংড়ি), ইলিশ (তেনুয়ালোসা ইলিশা), টলি শাদ, গোল্ডলাইনড সিব্রেম (পোয়া), ইন্ডিয়ান অয়েলড সার্ডিন (ফাইসা), ফিরগেট টুনা (সুরমা), বেররামুন্ডি (ভেটকি), লার্জ হেড রিবন ফিশ (ছুরি), পেইন্টেড টেইলড গোবি (চেমো), লং হুইস্কার (টেংরা), লং হুইস্কার ক্যাটফিশ (আইর), স্পটেড স্ক্যাট (চিত্রা), লেন স্ন্যাপার, স্পটেড আর্চারফিশ (চোরোই) ও গোল্ড স্পটেড গ্রেনাডিয়ারস অ্যানচোভি।

হরিনা চিংড়ির পেশিতে সর্বাধিক পরিমাণে প্লাস্টিকের কণা ছিল, প্রতি গ্রামে এর পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৩০ এবং দাতিনায় সর্বনিম্ন প্রতি গ্রামে ৫ দশমিক ৩৭ কণা বহন করেছিল।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে সর্বাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিকের বাহক হলো চেমো। সেখানে প্রতি গ্রামে কণার পরিমাণ ২০৫ এবং সর্বনিম্ন সুরমা মাছে আছে প্রতি গ্রামে ৭ দশমিক ৩৩।

গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলে বছরে তিনি ৭৪ হাজার ২৮২টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছেন। আর শিশুরা সপ্তাহে ৫০ গ্রাম মাছের পেশি গ্রহণ করে থাকলে বছরে মোট ১২ হাজার ৩৮০টি কণা গ্রহণ করছে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু মাছের ভোগ বছরে ১৪ কেজি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর আগে আমরা ছোট মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখেছিলাম। এখন জানা গেল সামুদ্রিক মাছও একই হুমকির মুখে।'

টক্সিন কার্সিনোজেন তৈরি করে, এমন ১০টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিক আইটেম। মানুষ যদি তা সেবন করে, তাহলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

'এই ধরনের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক যায়। যদি এটি পেটে জমতে থাকে, তবে পাচনতন্ত্র ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেবে। যদি এটি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, তবে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে', বলেন ডা. লেনিন।

মাইক্রোপ্লাস্টিক নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণও হতে পারে উল্লেখ করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, 'এ বিষয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে এবং যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা যদি এই হুমকি উপেক্ষা করে অলস বসে থাকি, তাহলে এক সময়ে গিয়ে আমাদেরকে প্রোটিনের মূল উৎস মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।'

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Fish under threat, humans too

Comments

The Daily Star  | English

World approves $300 bn for poor nations in climate deal

Nearly 200 nations approved Sunday a climate deal that raises to at least $300 billion a year the amount wealthy historic polluters pay poorer countries to take action against global warming

1h ago