দেশি ফলের সরবরাহে স্বস্তি দামে অস্বস্তি
বাজারে দেশি ফলের সরবরাহ এখন তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন ফল বিক্রেতারা। তবে উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ ভালো থাকার পরে দাম কিছুটা বেশি বলে জানান তারা।
পাইকারি বিক্রেতা মাফিল সরকার ১০ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফলের ব্যবসা করছেন। মূলত মৌসুমি ফলের ব্যবসা করেন তিনি। প্রায় ২ মাস ধরে মাফিল শুধু সফেদা ও পেঁপের ব্যবসা করছেন।
দ্য ডেইলি স্টারকে গতকাল বুধবার তিনি বলেন, 'যশোর ও খুলনা অঞ্চল থেকে সফেদা আনি। আর এখন যে পেঁপে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো আসে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার থেকে। পেঁপের মৌসুম মূলত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। মৌসুমে গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল থেকে পেঁপে আসে।'
মাফিল সরকার পাইকারি দরে প্রতি কেজি সফেদা বিক্রি করেন আকারভেদে ৫০ থেকে ১৩০ টাকায়। আর পেঁপে বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।
তিনি জানান, বাজারে এখন যে তরমুজ পাওয়া যায়, তা সুনামগঞ্জের। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বাজারে তুলনামূলক বেশি তরমুজ উঠবে। মূলত রাঙামাটি, টেকনাফ, বরিশাল থেকে তরমুজ বেশি আসে। এপ্রিলে তরমুজ আসে খুলনা থেকে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। তবে পাইকারি বাজারে এই তরমুজ ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
ব্যাপারী মো. জসিম বলেন, 'আমরা কৃষকের কাছ থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁপে কিনি। ঢাকায় নিয়ে আসতে আসতে কিছু পেঁপে নষ্ট হয়ে যায়। এখানে এসে আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি করি।'
খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি সফেদা ১২০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
বাজারে এখন কদবেল ও দেশি বড় আকারের মিষ্টি বেল পাওয়া যাচ্ছে।
পাইকারি বেল বিক্রেতা ইউনুস খাঁ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আকার অনুযায়ী কদবেল প্রতি পিস ১০ থেকে ২০ টাকা এবং দেশি বেল ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি। সাতক্ষীরা ও রাজশাহী থেকে এই বেল আসে।'
কারওয়ান বাজারে কথা হয় খুচরা বেল বিক্রেতা মো. মোক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি সিলেট থেকে বেল কিনতে এসেছেন।
মোক্তার হোসেন বলেন, 'আমার কদবেল কেনা পড়ে প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা। বিক্রি করি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। দেশি বেল প্রতি পিস বিক্রি করি কেনা দামের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশিতে।'
কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তের ৬৪ নম্বর দোকানের পাইকারি পেয়ারা বিক্রেতা ফরহাদ খাঁ তার ব্যবসার অন্য এক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি মূলত কৃষকদের সার বীজ ও অন্যান্য খরচ দিয়ে সাহায্য করেন। কৃষক যে পেয়ারা উৎপাদন করেন, তা বিক্রি করে যে টাকা আসে, সেখান থেকে তিনি ৫ শতাংশ কমিশন পান।
ফরহাদ খাঁ বলেন, 'আমি প্রতি কেজি পেয়ারা আকারভেদে ৩৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি। মাদারীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল থেকে পেয়ারা আসে।'
তবে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
বাজারে কয়েক ধরনের বরই পাওয়া যায়। সেগুলো হলো— আপেল কুল, বল সুন্দরী, টক বরই, নারিকেলি বরই ও আপেল থাই বরই।
আপেল বরই প্রতি কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, নারিকেলি বরই ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং টক বরই মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে খোলা বাজারে প্রতি কেজি আপেল কুল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, নারিকেলি বরই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। টক বরই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
বাজারে জাম্বুরা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি পিস জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। প্রতি কেজি দেশি স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এই স্ট্রবেরির চাষ হয় যশোর, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
আজ কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, 'এক বছর আগে যে কমলা কিনতাম ১৮০ টাকায়, সেই কমলা আজ নিলাম ২৫০ টাকায়। এক বছর আগে পেয়ারা কিনতাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। সেই পেয়ারা এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আগের চেয়ে ফল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।'
একই কথা জানান সরকারি কর্মকর্তা রহিমা পারভীন। তিনি বলেন, 'সবকিছুর দাম বেড়েছে। বেতন সেই হারে বাড়েনি। চলা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আগে যে পরিমাণ ফল খেতাম, এখন আর খাওয়া হয় না। দাম বেশি। পেয়ারা, বরই, সফেদা, কমলা— সবকিছুরই দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।'
Comments