স্কুলের ভেতর শ্রমিক লীগের কার্যালয়!

খেলাধুলা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা
নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার রসুলপুর এলাকায় ফ্রি আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয়। ছবি: স্টার

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে পাশাপাশি দুটি সাইনবোর্ড। একটি বিদ্যালয়ের, কিন্তু অন্যটি! পথচারীররা প্রায়শই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন, কিন্তু পরক্ষণেই আবার দ্বিধায় পড়ে যান।

কেননা, স্কুলের প্রবেশমুখে টানানো রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যালয়ের (ওপেন লাইন শাখা, সৈয়দপুর) সাইনবোর্ড। ঘটনাটি নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার রসুলপুরের ফ্রি আমিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

স্থানীয়রা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, জায়গাটি আসলে বিদ্যালয়ের। এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা রেলওয়ে কারখানার কর্মী হওয়ায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে ১৯৫২ সালে রেল বিভাগের জমিতে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়ের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আওয়ামী লীগের শ্রমিক ফ্রন্ট রেলওয়ে শ্রমিক লীগের (ওপেন লাইন) শাখা। সেসময় থেকেই এই সংগঠনের নেতারা দাবি করে আসছেন যে, বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা তাদের। কেননা সেটি রেলের জমিতে অবস্থিত। এ কারণে স্কুল-প্রাঙ্গণে খেলাধুলা কিংবা বসে গল্পগুজব করার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী বর্তমানে ২৪৫ জন এবং শিক্ষক ৯ জন। তবে শিক্ষকদের সবাই নারী হওয়ায় স্কুলমাঠে আয়োজিত শ্রমিক লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত হতে অস্বচ্ছন্দ বোধ করেন বলে জানান।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক শিক্ষার্থী মান মূল্যায়নে এই প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শতভাগ। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে সৈয়দপুর উপজেলা পর্যায়ে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় তারা রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

বিদ্যালয়টির সামগ্রিক সফলতায় সন্তুষ্ট হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০০৭ সালে এখানে একটি অত্যাধুনিক ৩ তলা একাডেমিক ভবন প্রতিষ্ঠা করে দেয়।

তবে নিজেদের স্কুলমাঠ ব্যবহার করতে না পারার বিষয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, 'মাঠটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে খেলাধুলা করতে না পেরে টিফিনের সময় আমরা ক্লাসে অলস বসে থাকি।'

চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বলে, 'বিদ্যালয় মাঠে অনেক লোকের আনাগোনায় আমরা সংকুচিত বোধ করি।'

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা পারভিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত। রেলের জমিতে অবস্থিত হলেও সব আইনি ও আন্তঃবিভাগীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৈধতা পাওয়ার পরই ২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এখানে নতুন একটা ৩ তলা একাডেমিক ভবনের অনুমোদন দেয়।'

'বিদ্যালয় মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা কাছের ফিদা আলী ইন্সটিটিউট মাঠে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করে থাকি', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, বিদ্যালয়টি ব্যস্ততম সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় বাচ্চাদের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক সংগঠনটির কোনো কোনো নেতা প্রতিষ্ঠানটির মূল গেট ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে বাধা দিয়েই যাচ্ছেন।'

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ (ওপেন লাইন) নেতা রফিকুল ইসলাম বেশ রেগে যান।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিদ্যালয়টিকে জায়গা দিয়ে এখন নিজেরাই অপরাধী হলাম। আমাদের সংগঠন জমি ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে ৩ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। আমরা জমি দান করার আগে উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা একটি চুক্তিতে উপনীত হয় যে, উভয়েই নিজ নিজ কর্মসূচি এই মাঠে আয়োজন করতে পারবে।'

'আমরা দিনের বেলা সংগঠনের অফিসে যাই না, কারণ সেসময় আমাদের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে সন্ধ্যার পর যাওয়ার সুযোগ হয় যখন বিদ্যালয় বন্ধ থাকে', যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার সদ্য সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউল হক জিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর একটি বড় শ্রমিক সংগঠনের অফিস থাকা খুবই বিব্রতকর। আমাদের মেয়াদকালে এর নেতৃবৃন্দকে ভিন্ন একটি জায়গা প্রদান ও অফিস স্থানান্তরে সহায়তার প্রস্তাব দিলেও তারা তাতে সাড়া দেননি।'

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মণ্ডল ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে উত্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নিজেও এ বিষয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

2h ago