ভুট্টা চাষ: খরচ ৫০ হাজার, লাভ ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা

ভুট্টা চাষ
লালমনিরহাটের আদিতমারীর সালমারায় ভুট্টাখেতের পরিচর্যায় কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ভুট্টা চাষ করে প্রায় এক লাখ কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিশেষ করে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের কৃষকরা সবেচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন ভুট্টা চাষে।

রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হচ্ছে লালমনিরহাটে। এটি এই জেলার 'ব্র্যান্ডিং' ফসলে পরিণত হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।

গত বছর ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন।

এ বছর লালমনিরহাটে ভুট্টা চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ ভুট্টা উৎপন্ন হচ্ছে তিস্তার চরাঞ্চলে।

রংপুর অঞ্চলের প্রায় এক লাখ কৃষক ভুট্টা উৎপাদনে জড়িত। এর মাধ্যমে তারা আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন। ভুট্টা চাষ তাদেরকে স্বাবলম্বী করেছে।

কৃষকরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত বছর তারা প্রতি মণ ভুট্টা ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। এতে অনেক লাভ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫-৪৫ মণ ভুট্টা উৎপন্ন হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর সিন্দুর্ণার কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। উৎপাদন পেয়েছিলাম ২৫০ মণ। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টা বিক্রি করেছি ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ বছর ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।'

'আশা করছি, এ বছরও ফলন ভালো পাবো,' যোগ করেন তিনি।

তিনি মনে করেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার বাজারদর আরও বাড়বে।

বলেন, 'প্রায় ১৫ বছর ধরে তিস্তার চরে ভুট্টা চাষ করছি। এর আগে এ মাটিতে ফসল তেমন উৎপন্ন হতো না। ভুট্টা চাষ করে খুবই লাভবান হয়েছি। পাকা বাড়ি করেছি। এক বিঘা জমি কিনেছি। আগে খুব অভাব ছিল।'

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ভুট্টা চাষ করে লাভবান হয়েছি। এ বছর ৫ বিঘা জমি বাড়িয়ে ১৫ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা চাষ আমাদের এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটিয়েছে। এখন গ্রামের সব কৃষক সচ্ছল।'

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর জোরগাছের কৃষক দিদারুল ইসলাম (৫৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৩ বছর ধরে চরের জমিতে ভুট্টা চাষ করছি। অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টায় বেশি লাভ হচ্ছে। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। এ বছর চাষ করছি ১২ বিঘা জমিতে।'

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক যতীন চন্দ্র সেন (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানকার কৃষকরা এ ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এখন তিস্তার চরে শুধু ভুট্টা আর ভুট্টা। ৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। প্রতি ডিসেম্বরে ভুট্টা চাষ করা হয়। ফসল তোলা হয় এপ্রিল থেকে মে মাসে।'

ভুট্টা ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া এলাকার ভুট্টা ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফিড কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলে ভুট্টা ক্রয়কেন্দ্র ও গুদাম করেছে। কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ভুট্টা কেনা হয়। অনেক সময় কৃষকদের অগ্রিম টাকাও দেওয়া হয়। দেশে চাহিদার অর্ধেক ভুট্টা উৎপন্ন হচ্ছে। বাকি অর্ধেক আমদানি হয়।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুট্টাকে লালমনিরহাটের "ব্র্যান্ডিং ফসল" বলা হয়। ভুট্টা চাষ লালমনিরহাটের ৪০ হাজার কৃষকের ভাগ্যের উন্নতি ঘটিয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা ভুট্টা চাষে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।'

'কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ভুট্টা চাষে পরামর্শ দেওয়া হয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'লালমনিরহাটের ভুট্টা প্রোসেসিং কেন্দ্র খোলার প্রয়োজনীয়তা আছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় এক লাখ কৃষক ভুট্টা চাষ করে উন্নতি করেছেন। প্রতি বছর ভুট্টা চাষের পরিধি বাড়ছে। কারণ, এর উৎপাদন খরচ কম, অথচ ফলন বেশি। বাজারমূল্য আশানুরূপ হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে উৎসাহী হয়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago