‘আমরা রোহিঙ্গা, সন্ত্রাসী নই’ তুমব্রু সীমান্তে গুলিবিদ্ধ মুহিব্বুল্লাহ

বুধবার তুমব্রু সীমান্তে দিনভর গোলাগুলির পর শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে গত বুধবার সকালে গোলাগুলির ঘটনায় ১ জন নিহত ও ১ জন আহত হন। এ ঘটনায় আহত রোহিঙ্গা যুবক মুহিব্বুল্লাহ (২৩) বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সেদিন মুহিব্বুল্লাহ বুকে ও ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হন। আজ শুক্রবার হাসপাতালে তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে গোলাগুলির ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, 'তখন প্রায় ভোর হয়ে গেছে। ফজরের নামাজের ঠিক পরে, আমরা তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।'

তাদের দলে ৮৫ জন সদস্য ছিল বলে জানান মুহিবুল্লাহ।

'হঠাৎ করে মিয়ানমার আর্মি আমাদের লক্ষ্য করে  গুলিবর্ষণ শুরু করে। তারা হয়তো আগেই আমাদের অবস্থানের খবর পেয়েছিল। তাই অতর্কিত হামলা চালায়। প্রস্তুত না থাকায় হঠাৎ আমরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এক পর্যায়ে আমি বুকে ও ডান হাতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। পরে কীভাবে যেন সীমান্ত পার বাংলাদেশে প্রবেশ করি।'

মুহিব্বুল্লাহ জানান, তার গ্রামের বাড়ি মিয়ানমারের মংডুতে। ২০১৭ সালে তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর তারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

মুহিবুল্লাহ বলেন, 'আমি আবার ২০১৮ সালে মিয়ানমারে ফিরে আসি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করি।'

তবে তিনি তাদের দলের নেতার নাম বলতে রাজি হননি।

মুহিবুল্লাহ বলেন, 'আমরা সবাই আমাদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছি। আমরা সন্ত্রাসী নই, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। দেশপ্রেমের কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। তারা আমাদের ও আমাদের পরিবারের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছে, আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ছাই করেছে এবং আমাদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করেছে।'

'এখন আমরা উদ্বাস্তু,' যোগ করেন তিনি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুহিব্বুল্লাহর দেখাশোনা করছেন তার ভগ্নীপতি মো. শাকের। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গুলিবিদ্ধ মুহিব্বুল্লাহকে প্রথমে কুতুপালং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, 'বুধবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা মুহিব্বুল্লাহর খবর দেন। খবর পেয়ে আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই এবং চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসি।'

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আলাউদ্দিন তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার হাসপাতালে মুহিব্বুল্লাহর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চমেক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের এক চিকিৎসক ডেইলি স্টারকে জানান, মুহিব্বুল্লাহর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।

বুধবার ভোর ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি চলে।

সেদিনের গোলাগুলিতে মারা যান আরেক রোহিঙ্গা যুবক হামিদ উল্লাহ (২৭)। 

পার্শ্ববর্তী উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, সেদিনের নিহত ও আহতরা মিয়ানমারের কোনো সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP rally begins at Nayapaltan

The rally will conclude at Manik Mia Avenue, where the closing speech will be delivered by Tarique Rahman

36m ago