কংক্রিটের সেতু ভেঙেছে ৫ বছর আগে, এখনো বাঁশের সেতুই ভরসা

২০১৭ সালের বন্যায় ধসে পড়ে এই কংক্রিটের সেতুটি। ছবি: স্টার

নীলফামারী ও দিনাজপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ভূল্লি নদীর ওপরে নির্মিত কংক্রিটের সেতুটি সংযুক্ত করে রেখেছিল ২ জেলাকে। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটি ভেঙে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা মেরামত না হওয়ায় সেতুর ২ পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কাটেনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, কংক্রিটের সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরপরই তারা নিজেরা চাঁদা তুলে পাশেই একটি অস্থায়ী বাঁশের সেতু তৈরি করে নেন। তবে সময় পরিক্রমায় ওই সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তাদের ভাষ্য, এই বাঁশের সেতু ব্যবহার করে পথচারী, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারলেও তা ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপোযোগী। ফলে এসব যানবাহনকে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করে দীর্ঘ পথ ঘুরে অপর পাড়ের গন্তব্যে যেতে হয়।

কয়েক মাস আগে রাতের বেলায় এক মোটরসাইকেল আরোহী বাঁশের সেতু থেকে নদীতে পড়ে মারা যান। এছাড়া এই সেতু থেকে পড়ে মাঝে মধ্যেই আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য বলছে, ভূল্লি নদীটি পঞ্চগড়ের উপর দিয়ে বয়ে চলা করতোয়া নাদীর একটি শাখা। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের কাছাকাছি জায়েগা থেকে এর উৎপত্তি। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে নদীটি পূর্বতীরে নীলফামারী জেলার খোকশাবাড়ী ও পশ্চিম তীরে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকদিহি গ্রাম অতিক্রম করে ২ জেলাকে বিভক্ত করেছে।

নীলফামারীর খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় জানালেন, ৬০ ফুট দীর্ঘ ও ৮ ফুট চওড়া কংক্রিটের সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে। ২০১৭ সালের বন্যায় এর একটি অংশ ভেঙে যায়।

এই জনপ্রতিনিধি বলেন, '৫ বছরেও এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মেরামত না হওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।'

সম্প্রতি এলাকাটি ঘুরে ডেইলি স্টারের এ প্রতিবেদক দেখতে পান, নদীর ২ পাড়ে অন্তত ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এগুলোর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি।

নীলফামারী প্রান্তের কুকরারডাঙ্গা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মাহাতাবউদ্দীন বলেন, 'সেতুর পশ্চিমে দিনাজপুর এলাকা থেকে প্রতিদিন ২ শতাধিক শিক্ষার্থী অপ্রশস্ত বাঁশের সেতু পার হয়ে আসে। একসঙ্গে বেশি মানুষ সেতুটিতে উঠলে এটি দুলতে থাকে। কেউ কেউ পানিতেও পড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নদীপাড়ের কৃষিখাতে কর্মরত কৃষকরা তাদের উদ্ধার করেন।'

দিনাজপুর প্রান্তের পশ্চিম বাসুলী গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন (৪৫) বলেন, 'আমার মত অনেকেরই নীলফামারী প্রান্তে আবাদী জমি আছে৷ আবার দিনাজপুর প্রান্তেও নীলফামারীর মানুষের জমি আছে। এ অবস্থায় কংক্রিটের সেতুটি বছরের পর বছর মেরামত না হওয়ায় ফসল, সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি পরিবহনের ক্ষেত্রে আমাদের অবর্ণনীয় দুেএভাগ পোহাতে হয়।'

নীলফামারীর মোনাগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যাবসায়ী আব্দুল আলীমের (৫৫) ভাষ্য, তিনি সেতুর পশ্চিম পাড়ের ভূল্লী বাজার থেকে তার দোকানের জন্য পাইকারি দরে মালামাল কেনেন। কিন্তু সেতু ঠিক না থাকায় অতিরিক্ত পরিবহন খরচের জন্য তার ঠিক পোষায় না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি থেকে নীলফামারী সদর উপজেলার দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। পক্ষান্তরে খানসামা উপজেলার দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার। তাই কাজের সুবিধার্থে খানসামা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ওপরেই সেতু মেরামতের দায়িত্ব বর্তেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শাহ ওবায়দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেতুটি মেরামত সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago