মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। ছবি: স্টার
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। ছবি: স্টার

সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ১১ ব্যাংক সামগ্রিকভাবে ৩২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। যার মাধ্যমে উঠে এসেছে বহু বছরের অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির দুর্বলতার চিত্র।

এই তালিকায় আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।

দুর্নীতির কারণেই মূলত এই ব্যাংকগুলোতে বড় আকারে মূলধন সংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের ঘাটতি যথাক্রমে ২ হাজার ৮৫১ কোটি, ২ হাজার ৩৯০ কোটি ও ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

এসব তথ্য বিবেচনায় বিশ্লেষকরা তাৎক্ষণিকভাবে এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেয় যে, দেশের ব্যাংকিং খাত দুর্বল অবস্থায় আছে।

বিদেশি ব্যাংকগুলো কোনো স্থানীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করার আগে ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি নিরীক্ষণ করে থাকে।

সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়, যেটি এই খাতের মূলধন ভিত্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এরকম ৬০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সেপ্টেম্বরে ১৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটিতে পৌঁছায়, যা একটি নতুন রেকর্ড। ব্যাংকিং খাতের মোট ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশই এখন খেলাপি। ১ বছর আগে এই অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে খেলাপি ঋণের বিপরীতে বড় পরিমাণ অর্থ জরুরি তহবিল হিসেবে আলাদা করে রেখেছে, যার প্রভাব পড়েছে মূলধনের ওপর।

গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে মূলধন ভিত্তি আরও কমে আসে। কারণ এ সময়ের মাঝে মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ০১ শতাংশে নেমে আসে।

সিএআর একটি ব্যাংকের মূলধন ও সম্পদের পরিমাণ বিচারে আর্থিক সক্ষমতার পরিমাপ করে থাকে। আমানতকারীদের সুরক্ষা দেওয়া ও আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও উপযোগিতা প্রমাণে সারা বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় এটি বহুল ব্যবহৃত একটি সূচক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের মূলধন ভিত্তি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দুর্বল।

২০২১ সালে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সিএআর অনুপাত ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

মূলধন ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ব্যাসেল ৩ নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।

২০০৭-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, তদারকি ও ঝুঁকির ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকিতে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ব্যাসেল কমিটি কিছু নীতিমালা তৈরি করে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এই নীতিমালা ব্যাসেল ৩ নীতিমালা নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৪ সালের রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংকের সিএআর অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১২ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ব্যাংকিং খাতের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন 11 banks suffer capital shortfall

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

1h ago