আর্থিক দুরবস্থার প্রভাব ভোক্তাঋণে, ঋণ করে ঘি খাওয়া কমেছে!

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ঋণ নিতে আগ্রহী নয়, ফলে প্রবৃদ্ধি কমেছে ভোক্তাঋণের। এ যেন ঋণ করে ঘি খাওয়া কমেছে মানুষের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ব্যাংকগুলোও কনজুমার ক্রেডিট বা ভোক্তাঋণ দিতে খুব আগ্রহী নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণের মধ্যে ভোক্তাঋণের হার ছিল আট দশমিক ৬২ শতাংশ। আগের বছরে তা ছিল আট দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভোক্তাঋণ ছিল এক লাখ ৩৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা।

২০২০ সালে একই সময়ে মোট ঋণের মধ্যে ভোক্তা ঋণের হার ছিল ছয় দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল সাত দশমিক ৬৭ শতাংশ ও ২০২২ সালে আট দশমিক ৪৪ শতাংশ। 

মানুষ সাধারণত অভিজাত পণ্য, বিলাসবহুল পণ্য ও পরিষেবার জন্য ভোক্তাঋণ নিয়ে থাকে। এ ছাড়া, দৈনন্দিন নানা কাজে, অনুষ্ঠান, জমি বা বাড়ি ক্রয়, গাড়ি ক্রয়, বড় আয়োজন, ভ্রমণসহ নানা কাজে ভোক্তাঋণ নিয়ে থাকে। যেমন, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নেওয়া ঋণও ভোক্তাঋণের তালিকায় পড়ে।

তবে আর্থিক দুরবস্থার কারণে বিলাসবহুল পণ্যে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারপরও কেউ কেউ তাদের মাসের বাজার খরচ মেটাতে ভোক্তাঋণ নিচ্ছেন। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ভোক্তাঋণ বিতরণ করেছে নয় হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৭ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ভোক্তাঋণের পরিধি বাড়িয়ে চলছি। গৃহঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, গাড়ি ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড ভোক্তাঋণের প্রধান ক্ষেত্র।'

তিনি আরও বলেন, 'খুচরা কেনাকাটায় নেওয়া ঋণের প্রবৃদ্ধি খুব বেশি নয়। ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের তুলনায় তা এখনো নগণ্য।'

মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের মানুষ মূলত ভোক্তাঋণ নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পেশাজীবীরা এ ধরনের ঋণ নিয়ে থাকেন।'

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময়ে লোকসানের কারণে গত বছর আবাসন ও গাড়ি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল জানিয়ে সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, 'বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিন ভেক্তাঋণে প্রভাব ফেলেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভোক্তাঋণ বা রিটেইল লোন মানুষের উপার্জন ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া ও জীবনমানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত হচ্ছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ভোগ্যপণ্য ও ফ্ল্যাট কেনা, ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ও বেতনের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে। 

ব্যাংকগুলো শিক্ষা, চিকিৎসা, বিয়ে, ভ্রমণ, পেশাগত ঋণ, পরিবহন ঋণ, প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিপরীতে ঋণ, ডিপোজিট প্রিমিয়াম স্কিমের বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণ (ডিপিএস), ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্টের (এফডিআর) বিপরীতে ঋণসহ আরও অনেক কিছুতে ঋণ দিচ্ছে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খুরশেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তাঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।'

গত নভেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছায়। গত বছরের মার্চ থেকে তা নয় শতাংশের বেশি থাকছে।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করার কারণে সব ধরণের ঋণের সুদের হার বাড়ছে। ফলে মানুষ ব্যাংক ঋণ এড়িয়ে চলছেন।

সাধারণ ঋণের সুদহারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সুদহার ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে।

এম খুরশেদ আলম আরও বলেন, 'ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণের সুদের হার বেড়ে গেলে তা ভোক্তাঋণের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।'

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক কনজুমার ক্রেডিট বিতরণ করছে। ব্যাংকগুলো গৃহঋণ হিসেবে প্রতি গ্রাহককে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা ও পারসোনাল ঋণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা দিতে পারছে।'

তার মতে, ব্যাংকগুলো এখন ভোক্তাঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই রক্ষণশীল। কেননা, এই খাতেও খেলাপি বেড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Trump started this war, we will end it, says Iranian military

Iran vowed to defend itself a day after the US dropped 30,000-pound bunker-buster bombs onto the mountain above Iran's Fordow nuclear site

1d ago