চীনা ঋণের ‘ফাঁদে’ জিবুতি, কিস্তি পরিশোধে অপারগতা

বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের ছবির পাশে চীন ও জিবুতির পতাকা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো
বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের ছবির পাশে চীন ও জিবুতির পতাকা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

চীনা ঋণের 'ফাঁদে পড়ে খেলাপি হওয়া দেশের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ জাম্বিয়ার পর পূর্বাঞ্চলীয় দেশ জিবুতি মহাচীনের ঋণের কিস্তি শোধে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

আজ মঙ্গলবার চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে বলেছে, ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিবুতির এমন সিদ্ধান্ত ২ দেশের মধ্যে সম্পর্কে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে জাম্বিয়া চীনা ঋণের খেলাপি হয়েছিল। এ মহাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় অপর দেশ কেনিয়া ও ইথিওপিয়াও সেই পথে হাঁটতে যাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে—বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে চলতি বছর জিবুতির বৈদেশিক ঋণ সংক্রান্ত খরচ বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। আগে যা ছিল ৫৪ মিলিয়ন ডলার তা গত বছর ১৮৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

আগামী বছর এই খরচ ২৬৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের সঙ্গে জিবুতির অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি সামরিক সম্পর্কও বেশ জোরালো। ছবি: রয়টার্স
চীনের সঙ্গে জিবুতির অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি সামরিক সম্পর্কও বেশ জোরালো। ছবি: রয়টার্স

জি২০টর ডেট সার্ভিস সাসপেনশন ইনিশিয়েটিভের (ডিএসএসআই) হিসাবে জিবুতির বৈদেশিক ঋণের বকেয়া প্রতি বছর ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত জুনে তা ১০১ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা দেশটির জিডিপির ৩ শতাংশ।

অনলাইন তথ্যকেন্দ্র আরইডিডি ইনটেলিজেন্সের জ্যেষ্ঠ ক্রেডিট রিসার্চ বিশ্লেষক মার্ক বোহলুন্ড গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'জিবুতিতে চীনের ঋণ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।'

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২০ সালে জিবুতির বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের হিসাবে, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের কাছ থেকে জিবুতি দেড় বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে গত আগস্টে ফোর্বস ম্যাগাজিন জানায়, ২০২০ সালের তথ্য অনুসারে চীন থেকে ঋণ নেওয়া বিশ্বের ৫ শীর্ষ দেশের প্রথমে আছে জিবুতি। চীনের কাছে দেশটির ঋণ মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ৪৩ শতাংশ।

এই তালিকায় বাকি ৪ দেশ হলো—অ্যাঙ্গোলা (৪১ শতাংশ), মালদ্বীপ (৩৮ শতাংশ), লাওস (৩০ শতাংশ) ও কঙ্গো (২৯ শতাংশ)।

ম্যাগাজিনটি আরও জানায়, ৯৭ দেশ চীন থেকে ঋণ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া দেশগুলো আফ্রিকায়। মধ্য এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশও এই তালিকায় আছে।

ঋণের অর্থে মহাপ্রকল্প

আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে লোহিত সাগরের তীরে কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ জিবুতি। আফ্রিকার সঙ্গে এশিয়া ও ইউরোপ সংযোগ সৃষ্টি করায় জিবুতি বন্দরের দিকে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি বহুকালের।

জিবুতি বন্দর। ছবি: রয়টার্স
জিবুতি বন্দর। ছবি: রয়টার্স

আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও এ দেশে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাপানের সামরিক ঘাঁটি আছে। ২০১৭ সালে চীন আফ্রিকার এই দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে। শুধু তাই নয়, জিবুতিতে চীন-পরিচালিত দোরালেহ বন্দরের পাশেই এই ঘাঁটি।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সালে ৪৯২ মিলিয়ন ডলার চীনা ঋণ খরচ হয়েছে জিবুতি থেকে ভূ-বেষ্টিত ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার মধ্যে রেললাইন স্থাপনে এবং ৩২২ মিলিয়ন ডলার ঋণের অর্থ খরচ হয়েছে জিবুতি থেকে ইথিওপিয়ার হাদাগালা শহরের মধ্যে ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ পানি সরবরাহের পাইপলাইন তৈরিতে।

২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে জিবুতি নিজ দেশে দোরালেহ বহুমুখী বন্দর তৈরি করে।

প্রতিবেদন অনুসারে, জিবুতি এসব ঋণ নিয়েছে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না থেকে।

২০১৭ সালে মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল গড়তে জিবুতি চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোলডিংস কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়।

এ ছাড়াও, দোরালেহ বহুমুখী বন্দর সম্প্রসারণ করতে চীনের মার্চেন্ট গ্রুপ জিবুতিকে ৫৯০ মিলিয়ন ডলার তহবিল জোগায়।

দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার 'ঋণ করে ঘি খাওয়া'র পরিণতি বিশ্ববাসী দেখেছেন। পূর্ব আফ্রিকার জিবুতি সে রকম দুর্দশায় পড়ে কিনা এখন তাই দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

Jubo Dal leader dies in custody after 'jt forces picked him up'

The body of Touhidul Islam, 42, bore marks of trauma and injuries from his waist to the knees, family members said, alleging that he was tortured to death

1h ago