পেনশন ব্যবস্থাপনা বিলে বৈষম্য করছে আমলারা: মেনন

পেনশন ব্যবস্থাপনা বিলে বৈষম্য করছে আমলারা: মেনন
শনিবার দুপুরে ‘খেতমজুর ও গ্রামের শ্রমজীবীদের জন্য জমাবিহীন পেনশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলেছেন রাশেদ খান মেনন। ছবি: স্টার

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিলে বৈষম্য করেছে আমলারা। এ বিলটি 'আমলাতান্ত্রিক রচনা' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার দুপুরে 'খেতমজুর ও গ্রামের শ্রমজীবীদের জন্য জমাবিহীন পেনশন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, 'খেতমজুরদের জন্য জমাবিহীন পেনশন সুবিধা নাগরিক অধিকার হিসেবে নিয়ে সরকার ব্যবস্থা করবেন। আমলা, সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরকার পেনশন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে যেসব খেতমজুর তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'পেনশন বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে আছে। এ বিলটি পাশ করার আগে সংশ্লিষ্টদের উচিত খেতমজুর সংগঠন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা। ফিনল্যান্ড, মালদ্বীপসহ ৬৪ টি দেশে জমাবিহীন পেনশন সুবিধা আছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কিন্ত এ আইনে যা বলা হয়েছে তা সময় উপযোগী নয়।'

বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে খেত মজুরদের ভূমিকা অনেক। কৃষি সেক্টরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে তারা অবদান রাখছেন। তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মৌসুমি কাজ করায় তাদের বাৎসরিক আয় নেই, সঞ্চয় নেই। খেতমজুর যখন ৬০ বছর বয়স পার করেন তখন কর্মহীন হয়ে যায়। তাদের পক্ষে চাঁদা দেওয়া সম্ভব না। পেনশন স্কিমে খেতমজুর, গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষদের যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা নেই।'

অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'সরকারের উচিত সার্বজনীন পেনশন স্কিমে সবার জন্য মিনিয়াম একটি চাঁদা নির্ধারণ করে দেওয়া। তারমধ্যে দরিদ্র খেতমজুরদের এ চাঁদা সরকার দিবে। এটা সরকারের অনুদান নয়, এটি খেত মজুরদের অধিকার।'

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) বিনায়ক সেন বলেন, 'সার্বজনীন পেনশন স্কিমে খেতমজুরদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। পেনশন ফান্ড যে খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে তার জন্য সচ্ছতা থাকা জরুরি। বিনিয়োগ লাভজনক হবে কিনা সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি প্রশাসন এ ব্যবস্থা চালানো চ্যালেঞ্জিং হবে।'

তিনি বলেন, 'বিলটিতে যা বলা হয়েছে এটি ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষের জন্য বড় পাওয়া হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাহবুবুল মোকাদ্দেম বলেন, 'সার্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকার যে টাকা বিনিয়োগ করবে এ টাকা রাজস্ব থেকে দেওয়া হবে। যা জনগনের ট্যাক্সের টাকা। তাই সরকারের উচিত জনগণের টাকা দরিদ্র খেত মজুরদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা।'

অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'সরকারের উচিত সার্বজনীন পেনশন স্কিমে সবার জন্য মিনিয়াম একটি চাঁদা নির্ধারণ করে দেওয়া। তারমধ্যে দরিদ্র খেতমজুরদের এ চাঁদা সরকার দিবে। এটা সরকারের অনুদান নয়, এটি খেত মজুরদের অধিকার।'

বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন,  'সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী পেনশন সুবিধা পান। এ সুবিধা কয়েকদফা বৃদ্ধি করেছে সরকার। সার্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণে সরকারি কর্মচারীদের নিষেধাজ্ঞার আছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু বলা নেই।'

তিনি বলেন, 'সরকারের উচিত বাজেটে খেত মজুরদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সুবিধায় সরকারি বরাদ্দ থেকে দ্বিগুণ হওয়া উচিত খেতমজুরদের জন্য বরাদ্দ।'

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খেতমজুর ইউনিয়ন সভাপতি নজরুল হক নিলু। তিনি বলেন, 'আমাদের দাবি পূরণ না হলে দেশের সব খেতমজুর সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের ডাক দিবে।'

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

2h ago