দাম যাচাই না করেই ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা দরে ইভিএম কেনার প্রস্তাব

ছবি: সংগৃহীত

বাজারদর যাচাই না করেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) দাম নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করার সময় ২ লাখ ইভিএম কিনতে এর বাজারদর যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে।

এই কমিটি শুধুমাত্র ইভিএম ব্যবহারকারী দেশগুলোর নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট দেখেছে।

এই প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এসব ওয়েবসাইটে তারা ইভিএমের দাম খুঁজে পায়নি।

এই প্রকল্পের অর্থমূল্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইভিএমের সঙ্গে অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত ইভিএমের কোনো মিল নেই।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা প্রকল্পের এক নথি থেকে জানান যায়, কমিটি দেশের একমাত্র ইভিএম সরবরাহকারী বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) ইভিএমের মূল্য পাঠাতে বলে। তাদের পাঠানো দাম অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাবে ইভিএমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিটির একজন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইভিএমের বাজারদর নির্ধারণ করা সম্ভব না। কারণ যন্ত্রটি তৈরি করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানই এর তথ্য শেয়ার করে না।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, 'কেবল একটি উৎস থাকলে সেই জিনিসের বাজারদর নির্ণয়ের সুযোগ থাকে না। যেমন: আপনি পেট্রোলের বাজারদর যাচাই করতে পারবেন না। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেবে সেটাই মানতে হবে।'

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি ইভিএম মেশিনের সব আনুষঙ্গিক জিনিসসহ দাম হবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ভারতে ইভিএমের জন্য যে খরচ হয় তার ১০ গুণেরও বেশি দাম ধরা হয়েছে এই প্রস্তাবনায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতে একটি ইভিএমের দাম প্রায় ২০ হাজার টাকা।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নির্বাচন কমিশন এর আগে ইভিএমের জন্য যে খরচ করেছে এবারের মূল্য তারচেয়েও বেশি ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালে বিএমটিএফ দেড় লাখ ইভিএম সরবরাহ করে। তখন আনুষাঙ্গিকসহ প্রতিটি মেশিনের দাম ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

ওই বছর আনুষঙ্গিক জিনিস ছাড়া কিছু ইভিএম কেনা হয়েছিল। সেগুলোর দাম ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪৮৭ ডলার। এ বছরও মেশিনের ভিত্তি মূল একই রয়েছে (ডলার ১১০ টাকা হিসাবে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭০ টাকা)।

মো. আলমগীর বলেন, 'ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার ইভিএমের দাম বেশি। বিএমটিএফ একই ভিত্তিমূল্যে ইভিএম দিচ্ছে, কিন্তু ডলারের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে খরচ বেড়েছে।'

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৭ মে আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে বলার পর এটি আলোচনায় আসে।

বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মতো প্রধান বিরোধী দলগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন গত ২৩ আগস্ট ঘোষণা দেয়, নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এরপরই অতিরিক্ত ইভিএম কেনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনের কাছে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, যা পরবর্তী নির্বাচনে একযোগে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের শেষ দিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠায় কমিশন।

বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২০১০ সালে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এগুলো ব্যবহার করলেও কোনো সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়নি।

২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেনি।

নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। ওই নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

The home adviser met with both factions of Tabligh Jamaat today at the Secretariat

1h ago