‘মাইনসের এত অভাব ধইরছে, এ্যালা ভিক্ষাও দিবার চায় না’

আমরন বেওয়া । ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

'মাইনসের এত অভাব ধইরছে, মানুষ এ্যালা ভিক্ষাও দিবার চায় না। মুই এ্যালা ভিক্ষা করিয়াও প্যাটের ভাত যোগবার পাবার নাইতছোং না। একবেলা চাইটটা খাং তো ফির আর একবেলা না খ্যায়া থাকা নাগে। কোনদিন কোনদিন মোক না খ্যায়া থাকা নাগে। এদোন অভাব গেইল ২০ বছরোত মুই দ্যাখোং নাই।'

কথাগুলো বলছিলেন আমরন বেওয়া (৬৮)। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমরন বেওয়ার দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই।

প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী সোবাহান মিয়াকে হারান আমরন বেওয়া। স্বামীর রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে একমাত্র কন্যা সন্তান সোমেনা খাতুনের বিয়ে দেন। প্রায় ১০ বছর আগে স্বামীর রেখে যাওয়া ৭ থেকে ৮ বিঘা জমি ভাঙনের কবলে পড়ে তিস্তা নদীর উদরে বিলীন হয়ে যায়। অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার ঘরটি জরাজীর্ণ। ঝড়-বৃষ্টি আসলে অন্যের ঘরে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। নদীভাঙনে জমি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন তিনি। কাজ করার শারীরিক সামর্থ্য না থাকায় গেল ৪ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকারের দেওয়া প্রতিমাসে ৫০০ টাকা বয়স্কভাতা পাচ্ছেন তিনি। তাতে করে সংসার চলে না তার।

আমরন বেওয়া ডেইলি স্টারকে জানান, ৩ থেকে ৪ মাস আগে গ্রামের বাড়িগুলোতে গেলে ভিক্ষা পেতেন। প্রতিদিন ভিক্ষা করে ২ থেকে ৩ কেজি চাল এবং ৬০ থেকে ৭০ টাকা পেতেন। এখন ভিক্ষায় গেলে কোনো চাল পাচ্ছেন না। সারাদিনভর ১৫ থেকে ৩০ টাকা পান।

তিনি বলেন, 'গ্রামের মানুষ এখন বলছেন, বাহে হামরাগুলাই কষ্টোত আছোং। ঘরোত চাইল নাই। তোমাক ভিক্ষা দেই কোনটে থাকি। মানুষ যদি এ্যালা ভিক্ষাও না দ্যায় তাকহইলে হামরাগুলা বাঁচি ক্যাদোন করি।'

আমরন বেওয়া গেল ৩ থেকে ৪ মাস ধরে মাছ মাংস ডিম খেতে পারেননি। রাতে শুধু রান্না করেন। সকালে পান্তাভাত খেয়ে বাইরে বের হয়ে যান। বেশি দূর হাঁটতে পারেন না। আশপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরেন। বর্তমানে অভাব তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

আমরন বেওয়ার প্রতিবেশী জমসের আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, কয়েকমাসে আগে প্রায়ই তিনি আমরন বেওয়াকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। কিন্তু এখন তাকে সহযোগিতা করতে পারছেন না। তিনি নিজেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করছেন। তার পরিবারের লোকজনকেও অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। বাজারে সব জিনিসপত্রের দামে ঊর্ধ্বগতি। আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ তাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, 'হামরাও নদীভাঙা মানুষ। আগোত হামরা যেদোন কামাই করছিলোং এ্যালাং সেদোনই কামাই কইরবার নাইকছি। বরং এ্যালা মাঝে মাঝে কামাইও হয় না। আর জিনিসপাতির দামতো ডাবল হয়া গ্যাইছে। গ্রামোত হামারগুলার নাভিশ্বাস উঠি গ্যাইছে। নিজেই বাঁচি না হামরাফির ভিক্ষা দ্যাই কোনটে থাকি।'

Comments