এটা সত্যি যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
সাধারণ মানুষের কষ্টের পেছনে বৈশ্বিক কারণই বেশি দায়ী মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এটা সত্যি কথা যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হবে বলে আমরা মনে করি না। আশা করি, তাড়াতাড়ি আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কথা হলো সরবরাহ যদি কম থাকে তাহলে ব্যবস্থাপনা দিয়ে তো সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না। আবার সরবরাহ যদি বেশি থাকে তাহলে ব্যবস্থাপনা দিয়ে কমানো যাবে না। আসলে আমাদের সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের চিনি গুদামে পড়ে আছে, যেটা প্রসেস করে আসতে হবে। সেখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যার কারণে বাধাটা এসেছে। সেটাকে যদি আমরা অ্যাড্রেস করতে পারি তাহলে সরবরাহের সমস্যাটা থাকবে না, নির্ধারিত দামে আমরা দিতে পারবো।
বিদ্যুতের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইম্প্রুভ করছে তারা বলছে। পর্যায়ক্রমে গত ১৫ দিনে কিছুটা ইম্প্রুভ করছে। ওয়েদার তো ইম্প্রুভ করছে, যার ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার কিছুটা কমছে। পরিস্থিতি বলছে...গ্যাস তো আর বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করে না! যে মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে তারা বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেটাকে ধরে নিয়েই আমরা বলছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিদ্যুতের অবস্থা কিন্তু ইম্প্রুভ করবে। ইতোমধ্যে করতে শুরু করেছে।
সাধারণ মানুষের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর কোনো সুখবর আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খবর দিচ্ছি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, অনেকগুলো পণ্যের কথা এসেছিল। এরপর আমরা যখন কাজ করতে গেলাম, তখন দেখলাম কোনো কোনোটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। তারপরও আমি ট্যারিফ কমিশনকে বলেছি, তারা কাজ করছেন। এমনকি সিমেন্ট-রড নিয়ে তারা কাজ করছেন যেটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের না। তারপরও আমরা জানার চেষ্টা করছি। যদি বড় ব্যবধান থাকে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো।
সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের ট্যারিফ কমিশন ঠিক করবে। শিগগির আবার বসে পুরো জিনিসটা বিশ্লেষণ করে, স্টাডি করে আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে সঠিক মূল্য কত হওয়া উচিত।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যে পরিমাণ গম আমদানি হওয়ার কথা ছিল সেখানে একটা ঘাটতি দেখছি আমরা। আশা করছি, স্যাঙ্কশন প্রত্যাহার করলে গম সরবরাহ যদি স্বাভাবিক থাকে...আমাদের ব্যবসায়ীরা কিন্তু ইউক্রেনের দুরাবস্থার কারণে বিকল্প বাজার থেকে গম সংগ্রহ করেছেন। যদিও দাম বেশি পড়েছে, তবু সরবরাহ ঠিক রাখতে তারা সংগ্রহ করেছেন। কানাডা থেকে প্রচুর গম আসছে, মানও তুলনামূলক ভালো। আর কোনো পণ্য নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই।
আমরা যেটা করতে পেরেছি, ১ কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এটা সত্যি কথা যে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের পেছনে আমাদের চেয়ে বৈশ্বিক কারণই বেশি। এখন বৈশ্বিক কারণটা তো রাতারাতি আমরা চেঞ্জ করতে পারবো না! প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনো ভালো সময় থাকে, কখনো খারাপ সময় থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আশঙ্কা করছেন দুর্ভিক্ষ হতে পারে, খাদ্যের অভাব হতে পারে। তিনি সব সময় আগাম চিন্তা করেন যাতে করে আমাদের সমস্যা না হয়, বলেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যদি সতর্ক হই, চেষ্টা করি...ইতিহাস ঘেঁটে দেখবেন, '৭৪ সালে যখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছিল। তখন কিন্তু বঙ্গবন্ধু একই কথা বলেছিলেন, স্কুলের মাঠে হলেও তোমরা ধান লাগাও। তার পরে তো তিনি থাকলেন না কিন্তু পরের বছর যা প্রয়োজন ছিল তার চেয়ে বেশি আমাদের উৎপাদন হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। সময়টা খারাপ যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার তো উপায় নেই। কখনো কখনো আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হবে বলে আমরা মনে করি না। আশা করি, তাড়াতাড়ি আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।
Comments