সরকার এ মাসে লোডশেডিং থেকে বের হয়ে এসেছে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

নসরুল হামিদ
নসরুল হামিদ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিল পাসের আগে আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও গণফোরামের একাধিক সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আওয়ামী লীগ নেতাদের বিলিয়নিয়ার বানানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের ঘোষণা দিয়ে সরকার ঘরে ঘরে লোডশেডিং পৌঁছে দিয়েছে। 

জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'দায়মুক্তির এই বিধানের কারণেই মানুষ সুবিধা ভোগ করছে।'

আজ সংসদের বৈঠকে 'বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বিল ২০২২' পাসের জন্য উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। 

এর আগে বিলটির ওপর দেওয়া সংশোধনী এবং যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। 

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার জন্য নতুন আইন করতে বিলটি উত্থাপন করে প্রতিমন্ত্রী জানান, সামরিক আমলে প্রণীত এ সংক্রান্ত আইন বাতিলের জন্য নতুন এই আইন করা হচ্ছে।

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতকে আওয়ামী লীগ বিলিয়নিয়ার তৈরির কারখানা করা হয়েছে।'

বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন এবং একাধিকবার আইনের মেয়াদ বাড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'কেন বিদ্যুতের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে? বড় বড় ট্রান্সমিশন লাইন, এই সব কারখানা কাদের জন্য দেওয়া হয়েছে? এসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কাকে দেওয়া হয়েছে?'

জ্বালানি খাত নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়ে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, 'প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে নয়, সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কোনো গোপন নয়, প্রকাশ্যে আলোচনা হবে। এই ১৫ বছরে সরকার কী করেছে কী সর্বনাশ হয়েছে এ খাতের, তা জাতিকে জানাতে হবে। সরকারি দল বলবে তারা কী উন্নয়ন করেছে।'

প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে হারুন বলেন, 'সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এমপিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য।'

তিনি বলেন, 'আগামী ৩-৪ বছরে ভারত থেকে ৪-৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যোগ হবে। এগুলো সব বসে থাকেবে। কেন ভারত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে?'

তিনি আরও বলেন, 'ভারত আমাদের পানিতে মারছে, সীমান্তে মারছে, বাণিজ্যে মারছে। জ্বালানি খাতের মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভারতের ওপর নির্ভর হওয়ায় ঝুঁকির মুখে আছে।'

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা কোথায় গেছে, এমন প্রশ্ন তুলে হারুন বলেন, 'এই টাকা আপনারা উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়গুলো জানতে চাইলে আপনারা এড়িয়ে যান। উত্তরে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলের কথা বলছেন।'

তিনি বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'

ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গত ১৫ বছরে কত টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানতে চেয়ে হারুন বলেন, 'সব খাত আমদানি নির্ভর হওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি। চাপাবাজি দিয়ে দেশ চালানো যায় না।'

তিনি বলেন, 'সরকারের ভুল নীতির কারণে মানুষ বিপর্যস্ত। শিল্প কারখানা, বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। এই সরকারের আমলে ৩ বার ব্ল্যাকআউট হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো, তা সরকার স্পষ্ট করেনি।'

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুরবস্থা চলছে। একটি অশুভ চক্র এই খাতকে গ্রাস করেছে। প্রতিমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয় তিনি ওই চক্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।'

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, 'গ্যাস সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হলে এই অবস্থা হতো না। এখন দিনের বেলায় ঢাকায় রান্নার গ্যাস পাওয়া যায় না।'

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, 'বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের গলাবাজি দেখার মতো। টুকরিতে করে বিদ্যুৎ ফেরি করার দিন শেষ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা যতই থাক না কেন, ঘরে ঘরে চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তি দিয়ে রেন্টাল–কুইক রেন্টাল করে বিপুল লুটপাট করা হয়েছে। কিছু ব্যক্তির হাতে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা তুলে দিতে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। একদিন এসব লুটপাটের তদন্ত হবে। যারা লুটপাটে জড়িত হবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।'

এসব সমালোচনার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'বিশ্বে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কারখানা গ্যাসে চলে। এতে বিদ্যুৎ কারখানায় গ্যাস দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে লোডশেডিং করা হয়েছে। সরকার এই মাসেই লোডশেডিং থেকে বের হয়ে এসেছে। চাহিদা ধীরে ধীরে কমে আসছে।'

আগামী বছর খুব ভালোর দিকে যাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নসরুল হামিদ বলেন, 'দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে লোডশেডিংয়ে যেতে হয়েছে। জ্বালানি আমদানির বেশ কিছু অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তেল আমদানি করা হচ্ছে উচ্চমূল্য। তেলের মূল্য সমন্বয় করার পরেও বিপিসির বাৎসরিক ক্ষতি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।'

বিএনপির আমলে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সেটাকে মানুষ স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিয়েছিল।'

ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কারণ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'মাতারবাড়ি, পায়রা থেকে রংপুর বিদ্যুৎ নিতে সিস্টেম লস ও ট্রান্সমিশন ক্ষতি ৪ শতাংশ। সেটা লাভবান হবে না। কম দূরত্বে বিদ্যুৎ আনলে খরচ কম পড়বে। ভারত থেকে ট্রান্সমিশন খরচ কম পড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran has 'maximum' two weeks, dismisses Europe peace efforts

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

49m ago