গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে নীরব ভূমিকা পালন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হলে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়ম বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ও এজেন্ট গোপন কক্ষে ঢুকে ভোটারদের হাতের ছাপ নিয়ে নিজেরা ভোট দিলেও এ সময় নীরব ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেটরাও বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ নির্বাচন কর্মকর্তাদের।

নির্বাচন কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল বুধবার গাইবান্ধা-৫ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের অনিয়ম তদন্ত করতে ৪০ জন প্রিসাইডিং অফিসার ও ২৭৮ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের বক্তব্য শুনেছেন। অনিয়মের বিষয়ে তাদের অনেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে লিখিত বক্তব্য।

এরপর দ্য ডেইলি স্টার অন্তত ১৪-১৫ জন নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে অর্ধেক নির্বাচনী কর্মকর্তা বলেছেন, অনিয়ম বন্ধের ক্ষেত্রে তারা পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাননি।

সাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সামসুজ্জোহা বলেন, 'আমি (ভোট সংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তের জন্য ইসি গঠিত) তদন্ত কমিটিকে বলেছি যে আমার ভোটকেন্দ্রে কিছু অনিয়ম হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি তাদেরকে (দুর্বৃত্তদের) প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। পরে, পুলিশের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি।'

একই ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামও তদন্ত কমিটিকে একই কথা বলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কিছু এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নিয়ে নিজেরা ভোট দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমি পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। ম্যাজিস্ট্রেট তো সব সময় কেন্দ্রে থাকেন না।'

গত ১৩ অক্টোবর কিছু নথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। যেখানে দেখা যায়, অনেক  নির্বাচন কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে তাদের কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠু হলেও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় ভোট স্থগিত করতে হয়েছে। সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রাশিকুর রহমানও এই দাবি করেছেন।

তিনি জানান, ভোটের দিন কেউ একজন তাকে ফোন করে বলেছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে এমন বক্তব্য সাদা কাগজে লিখে সই করতে বলেন। পরে তার ইচ্ছা না থাকলেও নিয়ম ভেঙে তিনি তা করেছেন।

ভরতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা একেএম ফররুখ আলম জানান, ভোটের দিন তার কেন্দ্রে তিনি কোনো অনিয়ম দেখতে পাননি।

তিনি বলেন, 'গতকাল ইসির তদন্ত কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখালে গোপন বুথে একাধিক ব্যক্তির প্রবেশ চোখে পরে এবং অনিয়মের বিষয়ে জানতে পারি।'

তদন্ত কমিটির কাছে বিবৃতি দেওয়া অনেক নির্বাচন কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন যে উপ-নির্বাচনে অনিয়ম বন্ধে ব্যর্থতার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

তদন্ত কমিটি গতকাল বেশ কয়েকজন প্রার্থীর অন্তত ২০০ জন পোলিং এজেন্টের বক্তব্যও রেকর্ড করেছে।

জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীর এজেন্ট ফজলুল হক প্রধানের অভিযোগ, 'পুলিশ ভোটের দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের পক্ষ নিয়েছিল। তাদেরকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করেননি, কিন্তু আমাদের মোবাইল ফোন আগেই জমা নিয়েছে।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের লোকজন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশ সেই সময় নীরব ভূমিকা পালন করেছিল।'

সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম তদন্ত চলাকালে সাংবাদিকদের বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দিতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে তদন্ত কমিটি। এই কথা তারা ভয়ে বলতে পারছেন না।'

তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল বিকেলে সাঘাটা ইউএনও অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অশোক বলেন, 'কেউ তাদেরকে (নির্বাচন কর্মকর্তাদের) চাপ দেয়নি। বরং তারা চাপমুক্ত হয়ে প্রকৃত চিত্র ও নির্বাচনের দিন কী ঘটেছিল সেটাই জানাচ্ছেন।'

তদন্ত কমিটি গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৫ প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য শুনছেন।

গত ১২ অক্টোবর নির্বাচন চলাকালে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে' চলে যাওয়ায় গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন

এর একদিন পর, অনিয়ম তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে কমিশন।

তদন্তের অংশ হিসেবে, গত মঙ্গলবার  থেকে গাইবান্ধায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা শুরু করে কমিটি।

Comments

The Daily Star  | English

What are the factors leading to labour migration from Bangladesh?

A father of one, Fahimuzzaman said that his income in Bangladesh did not allow him to build any savings

36m ago