ডিগ্রি ছাড়াই তথ্যবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়

ইলাস্ট্রেশন: ইশানুর রাজা রনি

বর্তমান যুগ যে তথ্য-প্রযুক্তির, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই সব ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রেও তথ্যের রাজত্ব সর্বত্র স্বীকার্য। আর তথ্যবিজ্ঞানী বা ডেটা সায়েন্টিস্টরা সেসব তথ্যকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে থাকেন। সেই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় থাকে তথ্য পৃথকীকরণ, বড় পরিসরের তথ্য থেকে নির্দিষ্ট তথ্য বের করে আনার পদ্ধতিও। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই পেশাটি বেশ এগিয়ে আছে। ক্যারিয়ার হিসেবে তথ্যবিজ্ঞানে যদি কারও আগ্রহ থাকে, কিন্তু নির্দিষ্ট ডিগ্রি না থাকে, তাহলেও তারা এই কাজে বেশ সফল হতে পারেন। তবে কীভাবে? তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

তথ্যবিজ্ঞানের ভিত্তি সম্পর্কে জানা

যেকোনো বিষয়ে কাজ করার আগে তা নিয়ে কিছু প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। তথ্যবিজ্ঞানের উৎপত্তি মূলত গণিত, পরিসংখ্যান এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের মতো মৌলিক শাখা থেকে। এ বিষয়ে মৌলিক ধারণা পেতে ইউটিউব ভিডিও দেখা, বই পড়া বা বিভিন্ন ক্লাসে অংশগ্রহণ কার্যকর হবে। এ ছাড়াও, গণিত বিষয়ক জ্ঞানকে কাজে লাগানোর বেশ সুযোগ আছে তথ্যবিজ্ঞানে। বিভিন্ন অ্যালগরিদম এবং প্যাটার্ন বিষয়ে শেখার ক্ষেত্রে গণিত সাহায্য করবে। তাই গণিতে দক্ষতা থাকলে এ বিষয়েও ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবা যায়।

বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ

মৌলিক বিষয়ে জ্ঞানলাভের পরের ধাপটিই হচ্ছে বিশেষজ্ঞতা অর্জন। আর সেজন্য নির্ভর করতে হবে নির্দিষ্ট বিষয়ের কোর্সের ওপর। তথ্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্র সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করবে এই কোর্সগুলো। কোর্সেরা, ইউডেমি ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনেক কোর্স পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে আগ্রহীরা এ বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেন।

বিশ্বস্ত উৎস থেকে সার্টিফিকেট

উল্লিখিত অনলাইন প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যেও কোর্স সম্পন্ন করা যায়, তবে সার্টিফিকেট বা স্বীকৃতি গ্রহণের জন্য কিছু টাকা গুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বস্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত স্বীকৃতি ব্যক্তিকে নতুন কোনো কাজে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য এই স্বীকৃতিপত্র বেশ জরুরি। তবে কেউ যদি শুধুই দক্ষতার দিকে নজর দেয়, তারা সার্টিফিকেট ছাড়াই কোর্স শেষ করতে পারেন।

নিয়মিত চর্চা

চর্চা ছাড়া যেকোনো দক্ষতাতেই জং ধরে যাওয়া স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রেও তা-ই। এজন্য শিখে ফেলা কাজগুলো, লাভ করা দক্ষতাগুলোকে নিজের মতো করে চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলো অত্যন্ত সহায়ক। ছোটখাটো কাজ করার মাধ্যমে হাতখরচ পাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চর্চাটাও চলবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদী ইন্টার্ন গ্রহণ করা হয়। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এটিও ভালো বিকল্প। এতে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে তা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগবে।

অন্যান্য দক্ষতার চর্চা

একটি দক্ষতা অন্য দক্ষতাকে শক্তিশালী করে। তাই তথ্যবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে যে প্রযুক্তির অন্যান্য বিষয় বা সামাজিক দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে না, এমনটা নয়। প্রতিটি ক্যারিয়ারেই সবধরনের দক্ষতার একটি মিশ্র প্রয়োজন থাকে। অতিরিক্ত দক্ষতার হিসেবে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, তথ্য সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান, ভিজ্যুয়ালাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে জানতে হবে। এ ছাড়া, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা ইত্যাদি দক্ষতাকেও ব্যক্তিজীবনে এমনভাবে চর্চা করে যেতে হবে যাতে ব্যক্তিগত গণ্ডির বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরেও তা কার্যকর হয়।

প্রজেক্ট পোর্টফোলিও তৈরি

প্রয়োগের আগপর্যন্ত জ্ঞান শুধুই তত্ত্বমূলক। তাই কোন কোন দক্ষতা কোন কোন জায়গায় প্রয়োগ করা হয়েছে, সে প্রয়োগের ফলাফল কী– এগুলো দেখা দেবে ব্যক্তির সম্পন্ন করা কোনো প্রজেক্টের মধ্যেই। সেসব প্রজেক্টকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসার নামই মূলত পোর্টফোলিও। তথ্যবিজ্ঞানের ঠিক যে যে ক্ষেত্র নিয়ে ব্যক্তি কাজ করতে ইচ্ছুক, সেসব বিষয়ে আলাদা করে পোর্টফোলিও তৈরি করলে ভালো হয়। এতে কোনো চাকরির আবেদনের সময় সেই পোর্টফোলিও সহজে উপস্থাপন করা যাবে। নতুন করে আলাদা করার ঝক্কি পোহাতে হবে না। এসব প্রজেক্টের মধ্যে ব্যক্তিগত কাজ, ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট– সবকিছুই রাখা যাবে।

সাক্ষাৎকার

তথ্যবিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনো চাকরিতে আবেদনের আগে অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যান্য চাকরির মতো এতেও কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে, তবে বিশেষায়িত এমন কিছু প্রশ্ন থাকে যা তথ্যবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয় থেকেই করা হবে। যে প্রতিষ্ঠানের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া হবে, তাদের সম্পর্কে আগে থেকে ভালো করে জেনে যেতে হবে। যে পদের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, সেই পদ নিয়েও যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে। এ ছাড়া, এমন কোনো প্রশ্ন যদি করা যায়, যার উত্তর চাকরিপ্রার্থী জানেন না– সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য ও কাছাকাছি অন্য প্রশ্ন নিয়ে আলাপ করা যায়, এতে সাক্ষাৎকারগ্রহীতারা হতাশ হবেন না।

তথ্যসূত্র: মেইকইউজঅব ডটকম

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

7h ago