প্রিয়জনের বিচ্ছেদ ভুলে থাকতে করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

কেউ রেজাল্ট খারাপ করলে বলা যায় 'পরের বার ভালো হবে'। কেউ খেলায় জিততে না পারলে সান্ত্বনা দেওয়া যায়, 'আরেকটু প্র্যাকটিস করলেই হয়ে যাবে'। কারো অসুস্থতায় মমতা নিয়ে বলা যায়, 'সুস্থ হয়ে উঠবে তাড়াতাড়ি'। কিন্তু প্রিয়জন হারানোর বেদনার সময়ে কাউকে সান্ত্বনা দিতে কী বলা উচিত সেটা অনেকেই জানেন না।

প্রিয়জন ছেড়ে চলে গেলে অনেকেই বুঝতে পারে না আবার জীবনের মূলস্রোতে কীভাবে ফিরবে। অদ্ভুত এক শূন্যতার সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আর এই সময়টা কার জন্য কতদিন তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

পুরোনো স্মৃতি, কাছের মানুষকে ফিরে না পাওয়ার বেদনা ইত্যাদি ব্যাঘাত ঘটায় মনঃসংযোগের। উৎসাহ পাওয়া যায় না কাজে। যদিও দুঃখের বহিঃপ্রকাশ একেকজনের কাছে একেক রকম। তবু কমবেশি সকলেই এই সময়টা নিরিবিলি-চুপচাপ হয়ে যান। আর দীর্ঘদিন এ অবস্থাতেই থেকে ডিপ্রেশনের শিকার হওয়া অসম্ভব নয়। তাই দুঃখ, হতাশা থেকে বেরোনোর একমাত্র উপায় হচ্ছে কাজের মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন রাখা।

 ১) প্রিয়জন হারানোর পর নিজেকে একটু বুঝে উঠতে, প্রস্তুত করতে সময় দিন। কিন্তু তারপরেও দীর্ঘদিন নিজেকে কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা উচিত নয়। অফিসে এসে প্রথম প্রথম কাজে মনোনিবেশ করা একটু কঠিন। তাই প্রথম দিকে একটু হালকা থাকা, সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা, আপনাকে অনেক পজিটিভ করে তুলবে। সারাদিন কাজের ফাঁকে, লাঞ্চ ব্রেকে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন। ইতিবাচকভাবে আলোচনায় অংশ নিন, তবে খুব বেশি স্মৃতিচারণা এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা পুরোনো কথা মনে পড়লে তার ফল সবসময় সুখকর নাও হতে পারে। কথা বলতে বলতেই হয়ত জেনে যাবেন তাদেরও কোনো কোনো প্রিয়জন হারানোর আরো নির্মম গল্প আছে।

২) গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন, মিটিং, ফাইলের কাজগুলো দু'দিন পরেই না হয় শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু এই সময়টায় প্রয়োজন না হলে কাজ থেকে খুব একটা ছুটি নিজের একাকীত্বকে জাগিয়ে তুলবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার তাড়া, ভিন্ন ভিন্ন বিষয় ডিল করা বা একই বিষয় ভিন্ন ভিন্নভাবে ডিল করা, এমন নানান ভাবনা থাকলে 'কিছু ভালো লাগছে না' সংক্রান্ত চিন্তা মাথায় কম আসবে।

৩) বাড়িতে থাকলেও অফিসের কাজ এগিয়ে রাখতে পারেন। যেমন, কোনো প্রজেক্ট এরপরের সপ্তাহে জমা দিতে হবে, তবুও এর কাজ আগেভাগেই শেষ করে রাখলে এতে বাড়িতে থাকার সময় দীর্ঘ লাগবে না।

৪) জীবনের কঠিন সময় থেকে বেরোনোর আরেকটি মোক্ষম উপায় নিজের মতো, বা নিজের চেয়েও খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষদের অস্তিত্ব চোখে দেখে যাচাই করা। হারানোর বেদনা তীব্রভাবে অনুভব করলে, অসহনীয় হয়ে উঠলে হাসপাতালে ঘুরে দেখে আসতে পারেন কত মানুষ পৃথিবীতে অসহায়। কিংবা যেতে পারেন শিশুদের মাঝে। নিষ্পাপ শিশুদের মাঝে থাকলে আপনার দুঃখবোধ হয়তো কিছুটা কমে যাবে।

৫) পড়তে পারেন প্রিয় কোনো বই। যেগুলো জমেছিল অনেকদিন। লিখতে পারেন কোন রিভিউ। আপনার রিভিউ দেখে অন্য কেউ যে বইটা পড়েনি সেটার কথা জানতে পারলো, শিখতে পারলো। কিংবা ভবিষ্যতে আরো পড়ার আগ্রহ পেতে পারে।

৬) আপনার প্রিয় কোনো কাজের পরিচিতি পরিবারের বাইরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাতে পারেন। হতে পারে বন্ধুর কোনো স্কেচ এঁকে, চমকে দিতে পারেন, কোনো গান কাভার করতে পারেন ইউকুলেলে বা  প্রিয় গানের টিউন তুলতে পারেন কালিম্বাতে, কিংবা রান্নায় নিজেকে আরো জাহির করতে পারেন। এসব আপলোড করে দিন ফেসবুকের বন্ধুদের জন্য।

৭) শিক্ষার্থী হলে তো নিজেদের পড়াশোনা, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট সবকিছুই অ্যাটেন্ড করতে গিয়ে ফুসরত পাওয়াই মুশকিল। তবুও চাইলে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ফ্রিল্যান্সিং অথবা টিউশন করতে পারেন। দিনে ভীষণ ব্যস্ততা এবং রাতে ভয়াবহ ক্লান্ত শরীরে ঘুম জাঁকিয়ে বসবে।

 ৮) পরিবারকে সময় দিতে পারেন। কারণ আপনিই ভালো জানেন পৃথিবীতে এই মুহূর্তে যা ঘটছে সবই আসলে এক ধরনের অনিশ্চিত বিষয়। আজ যার সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক আছে সেটা কাল নাও হতে পারে। ঘটতেও পারে যেকোনো দুর্ঘটনা। তাই সময় হারানোর আগেই যে সময়টুকু পাচ্ছেন সেটা প্রিয়জনের সঙ্গে সুন্দর স্মৃতি নিয়ে কাটাতে পারেন। কারণ কাল যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ হয়ে যেতে পারে শুধুই স্মৃতি।

 ৯) নতুন কোন শখকে লালন করতে পারেন। ধরুন আপনি কোনো একটা জিনিস মোটামুটি পারেন। সেটাকে শানিত করতে গেলে আপনি খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু যেটা আপনি পারেন না সেটা শেখার জন্য যদি নিজের প্রস্তুতি শুরু করে দেন, সেটাই হবে বরং কঠিন এবং একইসঙ্গে ব্যস্ততার হাতিয়ার। যেই জিনিসটা আপনি পারেন না সেটা পারার আকাঙ্ক্ষাই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। ভুলে থাকতে সাহায্য করবে।

১০) কথা বলতে পারেন পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে। সবাই বন্ধু না হলেও অবশ্যই কিছু কিছু মানুষ আছে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদের খুঁজে নিয়ে সময় সুযোগ মিলিয়ে দেখা করতে পারেন, আড্ডা দিতে পারেন। তাহলে হয়তো পৃথিবীতে নিজেকে ভালোবাসাহীন কিংবা একা মনে হবে না। একাকীত্ব-ও ভর করতে পারবে না। জানা থাকবে, এই অসংখ্য মানুষের পৃথিবীতে এখনও আপনাকে ভালোবাসার, খেয়াল করার জন্য কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী আছে।

যাপিত-জীবন সুখ-দুঃখের একটি চক্রব্যূহ। কখনো দুঃখ থাকলে এর পরের সময়টা সুখের, আনন্দের হবে এটাই স্বাভাবিক। নাহয় সুখের দিনমান সময়ের পর প্রচণ্ড দুঃখবোধ তাড়া করবে। এটাও মানুষ মাত্রই জানেন। কিন্তু মেনে নেওয়াটাই বিষাদের, কষ্টের। তবে পৃথিবীতে এমন কোনো দুঃখ নেই যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝাপসা হয়না।

অন্তত সেই সময়টুকু তো জীবনকে দিতেই হবে। হারানোর বেদনায় নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে জীবনটাকে একটু একটু করে উপভোগ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ সব বিষাদকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরার সুযোগ দিয়ে আপনাকে তো পেরোতে হবে বাকী দীর্ঘ পথ।

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

15h ago