সুখী সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে কেন

সুখী সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন
ছবি: সংগৃহীত

আজকাল প্রায়ই তারকাপাড়ায় এদিক-সেদিক থেকে শোনা যাচ্ছে দীর্ঘকালীন বিয়েতে বিচ্ছেদের সুর। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দূরে সরে যাচ্ছে সময়ের চাইতেও দ্রুত। এমনই আরেকটি সমসাময়িক ও দিনে দিনে অনেকটা স্বাভাবিকত্বে রূপ নিতে যাওয়ার মতো বিষয় হিসেবে সামনে আসে সম্পর্কে প্রতারণা কিংবা একই সময়ে অন্য কারো সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা।

সুখী সম্পর্কে থেকেও তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটলে একে অন্যকে দোষারোপের আগে যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হচ্ছে– কী কমতি ছিল? আজকের এ লেখায় এমন কিছু প্রশ্ন নিয়েই কথা বলা হবে। চেষ্টা থাকবে উত্তর সন্ধানের।

নতুন আবিষ্কারের আগ্রহ

আজকের জগতটা এত বেশি বিস্তৃত যে নিজের পছন্দের সঙ্গে মিল আছে, এমন মানুষের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। সামাজিক জীবন ও প্রযুক্তি, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্পৃক্ততার কারণে এই সুযোগ আতশকাঁচের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে ধরা দেয়। বহুদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী থাকার পরও আমরা তখন সেই বাড়তে থাকা জানালার মধ্য দিয়ে নতুন সঙ্গ আবিষ্কারের আনন্দ চাই, আমরা ভাবতে ভালোবাসি– সোলমেট বলে কিছু থেকে থাকলে তার সঙ্গে দেখা হওয়া এখনও বাকি।

নতুন কেউ হাতছানি দিলেই আমরা পুরোনো জীবন ও সঙ্গীর মধ্যে হাজারটা ঘাটতি বের করে নিজেদের এই চিন্তাকে উসকে দিই, নিজেকে দোষীর কাঠগড়ায় না রেখে বরং দোষ দিয়ে বসি ইতোমধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কটিকে। তখন ঘরকে মনে হয় কারাগার, আর নতুন সব আমন্ত্রণকে মনে হয় মুক্তি।

আত্মবিশ্বাসের অভাব

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মানুষকে হরহামেশা বিপদের দিকে ঠেলে দেয়, আর তার অভাব করে তোলে ভঙ্গুর আর মনোযোগের ভিখিরি। কোনোভাবে যদি বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে মনোযোগের একটুও এদিক-সেদিক হয়, তখন ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আর এর পরের ধাপ প্রায়ই হয়, অন্য কোথাও মনোযোগ খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা। এ সময় তৃতীয় কারো অনুপ্রবেশের বিষয়টি খুব সহজে ঘটতে পারে। একটুখানি বাড়তি মনোযোগ আর সময়ের মাধ্যমেই তখন ফাটল ধরানো যায় দীর্ঘদিনের একটি মধুর সম্পর্কে।

একঘেয়েমি

নেতিবাচক ও ইতিবাচক হাজারো অনুভূতির মধ্যে যে বিষয়টিকে কোনোভাবেই কোনো ছাঁচে ফেলা যায় না, আবার সেটি থেকে বের না হলে জীবন হয়ে যায় রসকষহীন– তারই নাম লোকে দিয়েছে 'একঘেয়েমি'। একঘেয়েমি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

কর্মক্লান্ত সপ্তাহের পর ছুটির দিনে বলার মতো কিছু না করলে যেমন একঘেয়ে লাগে, তেমনি সপ্তাহের চতুর্থ দিনে কাজের বোঝাকেও একঘেয়েমিই মনে হয়। একইভাবে রোমান্টিক সম্পর্ক অনেকদিন চলার পর যখন একে অপরকে নতুন কিছু দেওয়ার নেই বলে মনে হয়, তখন সৃষ্টি হয় একঘেয়েমির সুতো। সেই সুতো টেনে কিছুদিন পথ চলার পর জড়ো হয় অভিযোগের বান্ডিল, যার ফাঁকফোঁকরে জায়গা করে নেয় বাইরের জগত আর সে জগতের নতুন নতুন মুখ। ব্যক্তি ভাবতে শুরু করে, এই সম্পর্কের বাইরেও তার প্রেমের চাহিদা আরো আছে, সেই জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়াবার সাধ যখন তীব্র হয়– তখনই সে পা রাখে চৌকাঠের বাইরে।

সামনে থেকে হয়তো কোনো যুগলকে সুখীই মনে হয়, লোকে তাদেরকে আদর্শ জুটি বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। কিন্তু হতেই পারে তাদের গল্পেও এমন কোনো বাঁক এসেছে, যা শুধু নিজেরাই জানে।

অনেক সময় মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ার যেমন আলাদা করে কোনো কারণ চিহ্নিত করা যায় না, তেমনি অনেকদিনের সুখের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণটাও নিজের কাছেই অজানা মনে হতে পারে। সেইসঙ্গে অচেনা মনে হতে পারে দীর্ঘদিনের ভালোবাসার সঙ্গীটিকে। সেই অচেনা অনুভূতি থেকে জন্ম নেয় অন্য কারো সঙ্গে একইভাবে জানাশোনার ইচ্ছে।  সুযোগ পেলে কেউ কেউ তাতে জড়ায়, কেউ নিজেকে সামলে নেয়। এই সামলে নেওয়া কিংবা জড়িয়ে পড়ার মধ্যকার সূক্ষ্ম সীমারেখাতেই লেখা থাকে একটি সম্পর্ক টিকে থাকা কিংবা ভেঙে পড়ার কারণ। নিয়ন্ত্রণটা নিজের হাতেই, মানুষ শুধু বেছে নেয়– হয় বিশ্বস্ততা কিংবা অতিক্রম করে যাওয়া নিজস্ব অথবা আরোপিত নৈতিকতার দেয়াল।

যদি কেউ সুখী সম্পর্কে থেকেও অন্য কাউকে বেছে নিতে যায়, তবে ধরে নিতে হবে তারা সুখী ছিলই না। কিংবা বিদ্যমান সুখকে তাদের কাছে সুখ বলে মনে হয়নি।

এস্টার পেরেল নামক একজন কাপল থেরাপিস্ট ২০১৭ সালে বলেছিলেন, সুখী মানুষেরাও প্রতারণা করে। কারণ তারা তখন নিজেদের হারিয়ে যাওয়া অংশের খোঁজে অন্য কাউকে খোঁজে। তারা এমন জীবন বাঁচবার আশায় এ কাজ করে, যা কখনো তাদের ছিল না। হয়তোবা যে জীবন ফড়িং, দোয়েল কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তির– তারই আশার মরীচিকায় মানুষ সুখের আড়ালে নতুন সুখ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে।

 

Comments

The Daily Star  | English

US tariff at 20% 'satisfactory', says Khosru

Will comment after knowing full details of the deal

1h ago