উত্তরবঙ্গের ৫ জেলায় আগাম আমন ধান কাটা শুরু

রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার মূচীর হাট গ্রামে আগাম আমন ধান কাটছেন শ্রমিকরা। ছবি: স্টার

মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের স্বল্পমেয়াদী আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে নিষ্ফলা আশ্বিনেই। এতে নীলফামারীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় নবান্ন উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে।

আমন ধান রোপণ শেষে কর্মহীন থাকা প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষিদের বাড়ির মজুদকৃত ধান শেষ হয়ে যায় বলে তারাও এ সময়ে অভাবে থাকেন।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে প্রথম নীলফামারী জেলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতে ধান কাটা শুরু হয়।

বাংলা মাস আশ্বিন ও কার্তিককে (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বলা হতো মঙ্গা মাস। যার অর্থ প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা।

আমন চারা রোপণ শেষ হলে দরিদ্র শ্রমজীবীদের কাজ না থাকায়, তাদের কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ক্রান্তিকালে তাদেরকে অর্ধাহার-অনাহারে থাকতে হতো।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) গবেষণায় আবিষ্কার মঙ্গাজয়ী স্বল্পমেয়াদী আমন ধান ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৫৭, বিনা ধান-৭ সহ অন্যান্য কয়েকটি উচ্চফলনশীল জাতের ধানের কারণেই আশ্বিনে মানুষের ঘরে ঘরে আজ নতুন ধানের নবান্ন উৎসব।

এ প্রসঙ্গে রংপুর জেলা কৃষি দপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন জাতের ধানগুলো রোপণের পর মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পেকে যায়। অথচ প্রচলিত জাতের গতানুগতিক ধানগুলো রোপণের প্রায় ১৪০-১৫০ দিন পরে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'নতুন জাতের ধান আগেভাগে কাটা যায় বলে কৃষক ২ মাস আগেই তাদের জমি খালি পেয়ে যান। ফলে তারা প্রথমবার আগাম জাতের আলু আবাদ করে, দ্বিতীয়বার আবার আলু কিংবা অন্য যেকোনো রবি ফসল আবাদ করতে পারেন। পরে তারা ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারছেন।'

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর দূরাকুটি গ্রামে কৃষি শ্রমিকেরা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবি: স্টার

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে এ বছর ৬ দশমিক ২০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এখানে ১৮ দশমিক ১ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১ লাখ হেক্টরে চাষ হয়েছে স্বল্পমেয়াদী আগাম জাতের আমন ধান, যা গত বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি।

সম্প্রতি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মুচীরহাট গ্রাম ও তারগঞ্জের কুর্শা ও নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার রামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর দূরাকুটি গ্রাম পরিদর্শন করে দেখা যায়, উৎসবের আমেজে আগাম জাতের আমন ধান কাটা চলছে পুরোদমে।

মুচীরহাট গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৫ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ব্রি ধান-৩৮ আবাদ করে ৮০ মণ ফলন পেয়েছি। বাজার মূল্য ভালো থাকায় কাঁচা অবস্থায় তা বিক্রি করে ৮৮ হাজার টাকা পেয়েছি। সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে ৪০ হাজার টাকা লাগলেও, এখন লাভ পাওয়ায় ভালো লাগছে।'

রামগঞ্জ গ্রামের কৃষক বিনোদ বিহারী রায় ( ৬০) জানান, আগাম আমন কাটার পর তিনি জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, সংকটকালে স্বল্পমেয়াদী আগাম জাতের আমন ধান কেটে নেওয়ার সুযোগ থাকায় কৃষক ক্রমেই এই ধান চাষে ঝুঁকছেন। তারা একই জমিতে গতানুগতিক ৩ ফসলের পরিবর্তে একই চক্রে ৪টি ফসল ফলানোর সুযোগ পেয়ে বেশি লাভবান হবেন।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago