ডায়েট ছাড়াই কমবে ওজন!

ছবি: সংগৃহীত

শরীরের ওজন যখন স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন সেটা নারী বা পুরুষ উভয়ের জন্যই বেশ অস্বস্তিকর। বর্তমানে জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা বেড়েই চলেছে।

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর কথা চিন্তা করলে প্রথমেই যে কথাটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে ডায়েট। অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর জন্যে ক্রাশ ডায়েট, ইন্টারমেটিং ফাস্টিং, কিটো ডায়েট ইত্যাদি নানারকম ডায়েট করে থাকেন না বুঝেই৷ ডায়েট করা মানে অনেকেই মনে করেন খাবার না খাওয়া বা খাবারের পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে দেওয়া।

কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েট হলো বিশেষ অবস্থায় ব্যক্তি বিশেষে নিয়ন্ত্রিত বা শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ। সুষম খাদ্য গ্রহণ ব্যক্তির ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সুষম খাদ্য তৈরিতে একজন ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, লিঙ্গ ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যক্তির প্রয়োজনীয় দৈনিক ক্যালরি নির্ধারণ করা হয়।

একটি সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করবে৷ যদিও খাবার ও ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি শারীরিকভাবে ফিট হতে পারবেন, তবুও অনেকেই এই ক্যালরি মেপে খাওয়া বা নিজের পছন্দের খাবারগুলোকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াকে কষ্টকর মনে করেন।

ওজন বৃদ্ধি শুধু খাবারের জন্যই হয় তা নয়। শারীরিক অসুস্থতা, ঔষধ, হরমোন ইত্যাদি কারণেও হয়ে থাকে। তাই কী কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে তা জানা খুব জরুরি। সব ধরনের খাবার খেয়ে ও জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আপনি কমাতে পারেন শরীরের বাড়তি ওজন।

আসুন জেনে নেই কীভাবে কমাবেন আপনার ওজন—

খাওয়ার আগে সকালে কার্ডিও করা

নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হালকা ব্যায়াম যেমন, জোরে জোরে হাঁটা বা দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা ক্যালরি পোড়াতে এবং শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, তাদের অবশ্যই ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি বার্ণ করতে হবে। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার আগে ছোট কার্ডিও ওয়ার্ক যেমন- হাটা, জগিং, দৌঁড়ানো ইত্যাদি করে ভালো ফলাফল পেতে পারেন। সকালে ব্যায়াম করলে ক্যালরি বেশি বার্ণ হবে। ফলে খাওয়ার পর কার্ডিও করার চাইতে খাওয়ার আগে কার্ডিও করলে আপনি ভালো ফল পাবেন।

পর্যাপ্ত ঘুম

রাত জাগা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই রাত জাগার অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দেন। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করুন৷ প্রতি রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমালে আপনার শরীরের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে।

পানি পান

অনেকেই বলে থাকেন খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে পানি খেতে হবে, খাওয়ার ঠিক পূর্বে পানি খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু এটা একদমই একটা ভ্রান্ত ধারণা। বরং আপনি যদি একটু কম খেতে চান তাহলে খাওয়া শুরু করার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। এতে আপনার পেট কিছুটা ভরবে এবং খাওয়ার সময় তুলনামূলকভাবে কিছুটা খাবার কম খাবেন। এছাড়াও সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন। পানি বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ যৌগ হিসেবে কাজ করে।

খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে আপনার বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে এবং এটি আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। ডিম, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাদ্য বিপাক বৃদ্ধি করে। তবে কখনই কার্বোহাইড্রেড বাদ দিয়ে শুধু প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ নয়।

চিনি পরিহার

কাঙ্ক্ষিত ওজন কমানোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে চিনি পুরোপুরি পরিহার করা আবশ্যক। কারণ, মাত্র ১ চা-চামচ চিনিতে ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে, যা আপনার ওজন কমানোর অন্তরায়। কেননা আমরা এই চিনির ক্যালরিই অতিরিক্ত গ্রহণ করে থাকি। তাই যারা চা ও দুধে অতিরিক্ত চিনি খান তারা চিনি পরিহার করুন অথবা পরিমাণ কমিয়ে দিন।

যারা অতিরিক্ত খাবার হিসেবে কোমল পানীয়, মধ্য দুপুর বা বিকালের নাস্তায় সিংগাড়া, সামুচা বা অন্যকোন ডুবো তেলে ভাজা খাবার, রাতে বা দুপুরে খাবার পর মিষ্টি খাবার খেয়ে থাকেন তারা এখনই তা বাদ দেন। এ খাবার থেকে যে ক্যালরি পাওয়া যাবে তা আমাদের ওজন কমাতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিদিন খাবারের সময় নির্দিষ্ট রাখুন

অনেকে ওজন কমাতে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকেন, একবারে দুপুরে খাবার গ্রহণ করেন। প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে বিপাক ক্রিয়া স্লো হতে থাকে। আবার দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে একবারে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করবেন।

তথ্যসূত্র:

'গৃহিণীদের পুষ্টি', মাহফিদা দীনা রুবাইয়া, পুষ্টিবিদ।

  

Comments

The Daily Star  | English

Working to make people true source of all power: CA

He also said his government's responsibility is to bind people into a larger family

1h ago