পটুয়াখালীতে ভারী বর্ষণ-জোয়ারে ২০ কিমি বাঁধ ভেঙে গেছে

পটুয়াখালী বাঁধ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় রামনাবাদ নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ছবি: স্টার

বঙ্গোপসাগরে চলমান নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে পটুয়াখালীর ৮ উপজেলায় প্রায় ২০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে।

এর মধ্যে ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ও ১৯ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার আংশিক ভেঙে গেছে। ফলে সাগর ও সাগর সংলগ্ন নদ-নদীর লবণাক্ত পানিতে আমনের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা।

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে জেলার নিম্নাঞ্চল ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে, জোয়ারের কারণে জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার গলাচিপা, দশমিনা, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া, বাউফল, মির্জাগঞ্জ উপজেলার শতাধিক চর ৩ থেকে ৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়।

দশমিনা উপজেলার চর বোরহান ইউনিয়ন পরিষদ মাঠসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়।

পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের জরাজীর্ণ ও অকেজো স্লুইসগেটগুলো দিয়ে জোয়ারের পানি শহরের নতুন বাজার, সদর রোড, পোষ্ট অফিস রোড, এসডিও রোড. মহিলা কলেজ রোডসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত করে।

জেলার গলাচিপা ফেরিঘাটের ২ পাড়ের পন্টুনের গ্যাংওয়ে ও সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানায়, ওই ৩ দিনে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ার ও ভারী বর্ষণের কারণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে গেছে। কমপক্ষে ২০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এর মধ্যে ৫০০ মিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।'

বাঁধ মেরামতে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁধ মেরামত করা হবে।'

বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে সাগর ও সাগর সংলগ্ন নদনদীর লবণাক্ত পানি আমনের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

মির্জাগঞ্জের রানীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পায়রা নদীর বেড়িবাঁধ কয়েকটি স্থান ভেঙে যাওয়ায় আমন খেতে ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।'

একই গ্রামের কৃষক ছোবাহান মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাধের ভাঙা অংশ দিয়ে লবণাক্ত পানি আমন খেতে প্রবেশ করছে। আমনের ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুবিদখালী বাজার থেকে মেহেন্দিয়াবাদ গ্রাম পর্যন্ত অন্তত ৫ স্থানে পায়রা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হওয়ায় আমনের ক্ষতি হতে পারে।'

মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান লাভলু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে শ্রীমন্ত নদীর তীরবর্তী উত্তর মাধবখালী, কিসমতপুর ভুটিয়ার বাজার, কানকী রামপুর ও চরছৈলাবুনিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।'

কলাপাড়া উপজেলার পশ্চিম লালুয়া গ্রামের কৃষক আবুল বাশার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জোয়ার আর ভারী বর্ষণের কারণে বাঁধ ভেঙে রামনাবাদ নদীর পানিতে বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।'

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ কামাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জোয়ার ও ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago