৩ বছরের প্রকল্প, ৫ বছর পর ব্যয় বাড়লো ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি: সংগৃহীত

যে প্রকল্পটি ৩ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেটিতে ৫ বছর পর এসে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং এর জন্য ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় ও আরও ২ বছর মেয়াদ বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য এই খরচ ও সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেসওয়ের কাঠামোর মূল নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কারণে প্রকল্পটির ব্যয় ও বাস্তবায়নের সময় বাড়াতে হয়েছে। ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির জন্য তারা দায়ী করছেন, যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু করাকে।

লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বন্দর নগরবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) যৌথ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রাঙ্কেনের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সরকার ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বন্দর নগরীর যানজট কমাতে এবং শহরের কেন্দ্রস্থলের সঙ্গে ২টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ও পতেঙ্গায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যোগাযোগ সহজ করতে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কাজ শেষ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

এই প্রকল্প ব্যয় ৩২ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করার জন্য আজ একনেক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেইসঙ্গে এর সময়সীমা ২০২৪  সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

এর আগেও ২ বার এই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, কিছু নতুন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা, বিদ্যমান উপাদানের পরিমাণ ও খরচ বৃদ্ধি এবং এক্সপ্রেসওয়ের কাঠামোর নকশায় পরিবর্তনের কারণেই প্রকল্প সংশোধন করতে হয়েছে।

চউক নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির পরিচালক মো. মাহাফুজুর রহমান বলেন, 'মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ১৩৮ কাঠা বেসরকারি ও সরকারি জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।'

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার পর এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় একটি বড় পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির জন্য ৬০০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করতে হবে। এর ফলে এই খাতের ব্যয় ২০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ ও মাটির নিচে বিদ্যুতের তার স্থাপনসহ ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের ব্যয় ১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২২০ কোটি টাকা হয়েছে উল্লেখ করে মাহাফুজুর বলেন, 'টোল প্লাজা নির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মতো নতুন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পের ব্যয় আরও ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে।'

বর্ধিত প্রকল্প ব্যয় বিশ্লেষণের জন্য ৪ সদস্যের একটি কমিটির প্রধান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন  বলেন, 'যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই তড়িঘড়ি করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ কারণেই নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে।'

প্রকল্প পরিচালক জানান, এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজন আছে কি না, তা জানতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) একটি দল প্রাথমিকভাবে একটি ট্রাফিক স্টাডি করেছিল এবং চউক এর জন্য মাত্র ১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, 'প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় বন্দর নগরবাসী দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'দেশের প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই খুবই নিম্নমানের এবং প্রায় সবক্ষেত্রেই খরচ ও সময়সীমা প্রাথমিক অনুমানের চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়।'

সরকার ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের দুর্বলতার কারণে এটা হয় জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ধরনের পরিস্থিতিতেই দুর্নীতি হয়।'

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Muhammad Yunus returns after COP29

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

2h ago