‘ফুয়েল লিকেজের’ কারণে নাসার চন্দ্রাভিযান অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য স্থগিত

উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর ফটোগ্রাফাররা তাদের ক্যামেরা ও অন্যান্য উপকরণ গোছানো শুরু করেন। ছবি: এপি
উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর ফটোগ্রাফাররা তাদের ক্যামেরা ও অন্যান্য উপকরণ গোছানো শুরু করেন। ছবি: এপি

একই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার চাঁদে রকেট পাঠানোর অভিযান স্থগিত হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা ব্যর্থতার কারণ হিসেবে 'ফুয়েল লিক' এর কথা উল্লেখ করেছেন।

গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্স নাসার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সর্বশেষ এ ঘটনার কারণে আর্টেমিস প্রকল্পের প্রথম চন্দ্রাভিযান অন্তত কয়েক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে।

শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে রকেট উৎক্ষেপণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে উৎক্ষেপণের পূর্ব প্রস্তুতির সময়ই, প্রায় ৩ ঘণ্টা আগে ৩২ তলা উঁচু এসএলএস (স্পেস লঞ্চ সিস্টেম) রকেট ও ওরিয়ন ক্যাপসুলের যাত্রা স্থগিত করা হয়।

যাত্রার প্রস্তুতির সময় নাসার টেকনিশিয়ানরা রকেটের 'কোর-স্টেজ' জ্বালানি ট্যাংকে এই বড় আকারের 'লিকেজটি' চিহ্নিত করেন। এই লিকেজের ফলে রকেটের জ্বালানি ট্যাংকে পাম্প করে ঢোকানো উচ্চ মাত্রার শীতলীকৃত তরল হাইড্রোজেন প্রপেলেন্ট বের হয়ে যাচ্ছিল।

উৎক্ষেপণের প্রায় ৩ ঘণ্টা আগেই থেমে যায় কাউন্টডাউন। ছবি: এপি
উৎক্ষেপণের প্রায় ৩ ঘণ্টা আগেই থেমে যায় কাউন্টডাউন। ছবি: এপি

এর আগে, গত সপ্তাহের সোমবার জ্বালানি লাইনের লিকেজ ও ত্রুটিপূর্ণ তাপমাত্রা সেন্সরের কারণে উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

আগের সমস্যাগুলো দূর করার পর প্রকল্প ব্যবস্থাপকরা আবারও শনিবার এই অভিযান শুরুর উদ্যোগ নেন। সেসময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শনিবার কোনো সমস্যা দেখা দিলে সোম বা মঙ্গলবার আবারও উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে।

তবে গতকালের ঘটনার নিরীক্ষায় নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হাইড্রোজেন বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বেশ সূক্ষ্ম এবং এটি পুরোপুরি মেরামত করে মঙ্গলবারের মধ্যে রকেট উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

নাসার সহযোগী প্রশাসক জিম ফ্রি গণমাধ্যম ব্রিফিংয়ে জানান, এই অভিযান পরিচালনা করার পরবর্তী সুযোগ আসবে ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অথবা অক্টোবরে।

তিনি আরও জানান, অভিযান স্থগিত করার কারণে মহাকাশ যানটিকে আবারও লঞ্চ প্যাড থেকে সরিয়ে অ্যাসেম্বলি দালানে নিয়ে যেতে হবে। কেপ ক্যানাভেরালের নিয়ম অনুযায়ী, একটি সুনিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত রকেট লঞ্চপ্যাডে থাকতে পারে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটি উৎক্ষেপণ না করা গেলে আবারও নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে হয়, যেটি লঞ্চপ্যাডে সম্ভব নয়।

নাসার আর্টেমিস প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাইক সারাফিন জানান, কারিগরি সমগস্যাগুলো পুরোপুরি সমাধান করতে 'কয়েক সপ্তাহ কাজ করতে হবে।'

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন আর্টেমিস প্রকল্প পরিচালক মাইক সারাফিন। ফাইল ছবি: এপি
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন আর্টেমিস প্রকল্প পরিচালক মাইক সারাফিন। ফাইল ছবি: এপি

নাসার প্রধান বিল নেলসন জানান, 'রোলব্যাকের' কারণে মধ্য অক্টোবরের আগে এই অভিযান শুরু করা সম্ভব হবে না। অক্টোবরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে ক্রু পাঠানোর কথা রয়েছে এবং একই সময়ে এই ২ অভিযান চলতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো সময়, যেকোনো মহাকাশ অভিযান বাতিলের সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ থাকে। কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি প্রতিকূল আবহাওয়াও অভিযান বাতিলের বড় কারণ।

নেলসন আরও বলেন, 'সব কিছু ঠিক না থাকা পর্যন্ত আমরা রকেট উৎক্ষেপণ করবো না এবং এটাই স্বাভাবিক পরিচালনা প্রক্রিয়া। আমরা এভাবেই কাজ করতে থাকবো।'

নাসার প্রধান বিল নেলসন। ছবি: রয়টার্স
নাসার প্রধান বিল নেলসন। ছবি: রয়টার্স

১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে নাসার অ্যাপোলো অভিযানের আওতায় ১২জন নভোচারী চাঁদের বুকে অবতরণ করেছেন। এর পরে বা আগে অন্য কোনো মহাকাশ অভিযানে চাঁদের বুকে মানুষ নামতে পারেনি।

নতুন চন্দ্রাভিযান প্রকল্প আর্টেমিসে নাসার সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আছে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স ও ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের মহাকাশ সংস্থা। এই অংশীদারিত্বের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে চাঁদে ঘাটি তৈরি করার প্রচেষ্টা নেওয়া এবং মঙ্গলগ্রহে মানুষ অবতরণ করানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি।

নাসার নতুন এই মহাকাশ অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর পর চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে এই ফ্লাইটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংস্থাটি আশা করছে, আর্টেমিস-২ অভিযানের অংশ হিসেবে ওরিয়ন ক্যাপসুলে করে নভোচারীরা চাঁদের চারপাশে ঘুরে আসবেন।

উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় নাসার এসএলএস রকেট ও ওরিয়ন ক্যাপসুল। ছবি: এপি
উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় নাসার এসএলএস রকেট ও ওরিয়ন ক্যাপসুল। ছবি: এপি

নাসা আরও জানিয়েছে, পরবর্তী অভিযানে (আর্টেমিস ৩ বা আরও পরের কোনো অভিযান) প্রথম নারী ও শ্বেতাঙ্গ নন এমন নভোচারী চাঁদে অবতরণ করবেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
conflict over security responsibilities at Dhaka airport

Dhaka airport: APBn at odds with aviation force over security duties

A conflict has emerged between the Aviation Security Force (AVSEC) and the Airport Armed Police Battalion (APBn) over security responsibilities at Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA). APBn claims that AVSEC took control of their office on October 28, hindering their ability to perform duties effectively

59m ago