উইঘুরদের প্রতি চীনের আচরণ সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ: জাতিসংঘ

চীনের উইঘুর অধ্যুষিত অঞ্চল জিনজিয়াংয়ের একটি বন্দিশালা। ফাইল ছবি: এপি
চীনের উইঘুর অধ্যুষিত অঞ্চল জিনজিয়াংয়ের একটি বন্দিশালা। ফাইল ছবি: এপি

চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং প্রদেশে 'গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘ।

গতকাল বুধবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

আজ বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দিশালায় অন্তত ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানকে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা, যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনেও একই তথ্য জানানো হয়েছে। 

চীন জাতিসংঘকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছিল। বেইজিং এই অভিযোগকে পশ্চিমের শক্তিদের সাজানো নাটক হিসেবে অভিহিত করে।

প্রতিবেদনে উইঘুর মুসলমান ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে চীনের অত্যাচারের অভিযোগের দাবির সত্যতা যাচাই করা হয়েছে।

চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানান, তারা নির্যাতনের অভিযোগের স্বপক্ষে 'বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' পেয়েছেন এবং এই ঘটনাকে 'মানবতাবিরোধী অপরাধ' হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

প্রতিবেদনে চীনের বিরুদ্ধে অস্পষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা আইনের সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জাতিসংঘের দাবি, চীন তেমন কোনো দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই সংখ্যালঘুদের আটক করার সংস্কৃতি চালু করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেতের কার্যালয় থেকে এই প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্দিদের ওপর দুর্ব্যবহার ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়াও, বন্দিশালায় আটক উইঘুরদের জোর করে বিশেষ ধরনের চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে এবং তাদেরকে চীনের 'পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতিমালা' মেনে চলতে বাধ্য করা হয়।

জাতিসংঘ চীনকে শিগগির 'কোনো কারণ ছাড়া আটকে রাখা ব্যক্তিদের' মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়।

জিনজিয়াংয়ের কাশগার অঞ্চলে সেনা প্রহরার মাঝে উইঘুরদের দৈনন্দিন জীবন। ফাইল ছবি: এপি
জিনজিয়াংয়ের কাশগার অঞ্চলে সেনা প্রহরার মাঝে উইঘুরদের দৈনন্দিন জীবন। ফাইল ছবি: এপি

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বেইজিংয়ের কিছু উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়।

জাতিসংঘ সুনির্দিষ্টভাবে কিছু না জানালেও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, জিনজিয়াং প্রদেশে অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক আছেন।

৬০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ব উইঘুর কংগ্রেস নামের একটি সংগঠন এই প্রতিবেদনকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং এই সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

জিনজিয়াংয়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ উইঘুর বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান। জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যারা মুসলমান নন, তারাও প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও আরও বেশ কিছু দেশ এর আগে জিনজিয়াংয়ে চীনের কার্যক্রমকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করে নিন্দা জানিয়েছে। তবে এতদিন জাতিসংঘ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল।

বেইজিংকে এই প্রতিবেদনের একটি অগ্রিম অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল।

দেশটি নির্যাতনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং যুক্তি দেয়, বন্দিশালাগুলো সন্ত্রাস দমনের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে চীনের প্রতিনিধি এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেন। তাদের মতে, এটি 'চীনকে অপমানিত করেছে' এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।

তার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'এই তথাকথিত "বিশ্লেষণ" একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নথি, যেখানে প্রকৃত সত্যকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমের দেশ ও চীন-বিরোধী শক্তিদের মানবাধিকারকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ইচ্ছাকে সবার সামনে উন্মুক্ত করেছে।'

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেত। ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেত। ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাচেলেতের ৪ বছরের মেয়াদের শেষ দিনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Warrant for Shakib Al Hasan in a case over bounced cheques

Additional Chief Metropolitan Md Ziaudur passed the order after Shakib and three others failed to appear before the court today

57m ago