উইঘুরদের প্রতি চীনের আচরণ ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’: এইচআরডব্লিউ

জিনজিয়াং প্রদেশে চীনের তৈরি একটি ‘বন্দিশিবির’। ছবি: রয়টার্স

চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিগত সংখ্যালঘু উইঘুর ও অন্যান্য তুর্কিভাষী মুসলমানদের ওপর দেশটির সরকার যে আচরণ করছে, তাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং সেই অঞ্চলে ‘গণহারে আটক, নিপীড়ন-নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধের’ জন্য দায়ী।

গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, এইচআরডব্লিউ’র ৫৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন মতে, উইঘুর ও অন্যান্য তুর্কিভাষী মুসলমানদের গুম, নজরদারি, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে থাকা, জোর করে কাজ করানো, যৌন হয়রানি ও সন্তান ধারণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ নানা নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।

সংস্থাটির এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে স্ট্যানফোর্ড ল স্কুলের হিউম্যান রাইটস এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত কনফ্লিক্ট রেজুলেশন ক্লিনিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুর্কিভাষী মুসলমানদের ওপর চীনের নির্যাতন ‘নতুন কিছু নয়’। এখন এই অত্যাচারের মাত্রা ‘অভূতপূর্ব পর্যায়ে’ পৌঁছেছে।

প্রতিবেদন মতে, অন্তত ১০ লাখ মানুষকে ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে। সেসব মা-বাবাকে এসব শিবিরে রাখা হয়েছে তাদের শিশুদের অনেককে সরকারি প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয়েছে।

‘২০১৭ সাল থেকে বেইজিং এই ধরপাকড় জোরদার করেছে’ উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়েছে, ‘গত পাঁচ বছরে জিনজিয়াং প্রদেশে এর আগের পাঁচ বছরের তুলনায় গ্রেপ্তারের হার বেড়েছে ৩০৬ শতাংশ।’

২০১৭ সাল থেকে চীন সরকার ‘নানা কারণ দেখিয়ে’ সেখানকার তিন ভাগের দুই ভাগ মসজিদ ভেঙে ফেলেছে বলেও সংস্থাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এইচআরডব্লিউ’র চীন পরিচালক সোফি রিচার্ডসন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পরিষ্কার ভাষায় যদি বলি, মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অপরাধ করা হয়েছে বেসামরিক লোকদের ওপর। তাদের ওপর ধারাবাহিক ও বিস্তৃত আক্রমণের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের বিবেচনায় এগুলো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’

আন্তর্জাতিক আইনের মাপকাঠিতে জিনজিয়াংয়ে চীন সরকারের ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ ছিল কি না, তা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য সংস্থাটির গবেষণায় নেই বলে প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পার্লামেন্ট, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যে জিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ এ বিষয়ে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

জিনজিয়াংয়ে নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে চীন বলেছে, তারা সেখানে ‘চরমপন্থা’ দূর করতে ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ গড়ে তুলেছে। চীন সরকারের দাবি, সেই কেন্দ্রগুলোকে ‘বন্দিশিবির’ বলা হচ্ছে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে এইচআরডব্লিউ’র নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ জিনজিয়াংয়ের বিষয়ে ‘সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা’ ও সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ও এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে (ইউএনএইচআরসি) তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীনের দমনপীড়নের গোপন নথি ফাঁস

উইঘুরদের সঙ্গে চীন যা করছে তা গণহত্যা: কানাডা

শিনজিয়াংয়ে মুসলিম গ্রেপ্তারে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে চীন: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

উইঘুরদের পর চীনের টার্গেট উৎসুল মুসলমানরা

Comments

The Daily Star  | English

NCP unveils 24-point ‘New Bangladesh’ manifesto, calls for Second Republic and new constitution

Key pledges include recognising the July uprising and ensuring justice for those affected

9m ago