উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীনের দমনপীড়নের গোপন নথি ফাঁস

xinjiang-article-header-data-1.jpg
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ করে রাখছে চীনের সরকার, ফাঁস হয়ে যাওয়া এমন সব গোপন নথি পড়ার পর থেকেই ঠিকমতো খেতে ও ঘুমাতে পারছেন না রোজিনসা মামাত্তোতি।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জাতিসত্তার এই বাসিন্দা ও তার আত্মীয়স্বজনের কেউই চরমপন্থি নন। তবুও তাদের পেশা কী, কখন প্রার্থনা করেন, কী পোশাক পরেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আচরণ কেমন- এসব তথ্য লিখে রাখছেন দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা। এমনকি তার বোনকে সরকারি বন্দিশিবিরের নেওয়া হলো কেন, তাকে আর কতোদিন সেখানে রাখা হবে- সেসব তথ্যও রয়েছে নথিতে।

কেবল রোজিনসা মামাত্তোতির পরিবারই নয়, জিনজিয়াং প্রদেশের এমন হাজারো উইঘুর পরিবারের ব্যক্তিগত তথ্যের সরকারি রেকর্ড ফাঁস করেছেন সাংবাদিকরা।

বিবিসি, সিএনএনসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তা বিস্তারিত উঠে এসেছে।

কোন কারণ ছাড়াই অথবা তুচ্ছ কারণে শত শত উইঘুর পরিবারের লোকজনকে ধরে এনে দীর্ঘদিন বন্দিশিবিরে আটকে রাখছে চীন। যদিও তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রেখে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার যে দাবি করে আসছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার, ফাঁসকৃত গোপন নথিতে তার বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

document-2.jpg
ফাঁস হওয়া নথি। ছবি: সংগৃহীত

এ সংক্রান্ত নথি ফাঁসের এটি তৃতীয় ঘটনা। নথিটি জিনজিয়াংয়ের একটি উৎস থেকে এসেছে। এর আগেও সেখান থেকে এমন তথ্য ফাঁস হয়েছিল।

উইঘুরদের ওপর দমনপীড়নের ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার মুখে থাকার পরও চীন দাবি করছে, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদকে মোকাবিলা করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু নথি বলছে, ‘হিজাব পরা’ কিংবা ‘দাড়ি রাখার’ কারণেও লোকজনকে ধরে নিয়ে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হচ্ছে।

রোজিনসা মামাত্তোতির বোন পাতেমকে (৩৪) ধরে নেওয়ার কারণ হিসেবে নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি ‘সন্তান জন্মদান’ আইন ভঙ্গ করেছেন। গোপন সেসব নথি ফাঁস না হলে বিষয়টি জানতেই পারতেন না রোজিনসা মামাত্তোতি। কারণ ২০১৬ সালের পর থেকে তিনি তার বোনসহ পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কী ঘটছে, তা কোনোভাবেই জানতে পারছিলেন না।

তুরস্কের ইস্তানবুলে নিজ বাড়িতে সিএনএনের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রোজিনসা মামাত্তোতি বলেন, “আমি কল্পনাই করতে পারছি না যে, তুচ্ছ একটি কারণে আমার বোনকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।”

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নথিগুলো দেখার পরও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, কিন্তু সেখানে আমার পরিবারের সদস্যসহ আরও পরিচিতদের নাম দেখে আঁতকে উঠি, সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ি”, বলছিলেন রোজিনসা।

Detention Camps-4.jpg
জিনজিয়াংয়ে চীনের তৈরি একাধিক বন্দিশিবির। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসি জানাচ্ছে, জিনজিয়াংয়ে চীনের নীতিবিষয়ক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ আড্রিয়ান জেঞ্জ মনে করেন, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নথিগুলোর তথ্য সঠিক। তার মতে, এগুলো এখন পর্যন্ত তার দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ, যাতে প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাভাবিক অনুশীলনের ওপর সক্রিয়ভাবে নিপীড়ন ও শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

ওই নথিতে ‘নম্বর ফোর’ ট্রেনিং ক্যাম্প নামের একটি ক্যাম্পের উল্লেখ আছে। এর আগে চীন সরকারের ব্যবস্থাপনায় বিবিসির প্রতিনিধি দল সেটি পরিদর্শনও করেছে।

জেঞ্জ বলেন, “চীন যেসব কারণ দেখিয়ে উইঘুর মুসলিম জাতিসত্তার লোকদের আটকে রেখে সংশোধনের দাবি করছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বেশিরভাগ মানুষের আটক হওয়া ও শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধই নেই।”

Comments

The Daily Star  | English

Those speaking against Tarique Rahman are enemies of democracy: Fakhrul

"Those who are doing this are carrying out activities to destroy Bangladesh"

1h ago