বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে অস্ট্রেলিয়া

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: ফাইল ফটো

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয় শিবির এখন বাংলাদেশে। প্রাণঘাতী সামরিক দমন-পীড়নের মধ্যে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আসার ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে চলতি আগস্ট মাসে।

অস্ট্রেলিয়া প্রথম থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যাক্ষভাবে আর্থিক সাহায্যও করে যাচ্ছে নিয়মিত। 

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সাহায্য হিসেবে ২৬০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস পেইন কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। গত বছর সেখানে আগুন লাগার পর তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তার জন্য অতিরিক্ত ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছিলেন।

গণমাধ্যম এসবিএসকে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, খাদ্য, পানীয়, স্যানিটেশন, আশ্রয় এবং অন্যান্য সুরক্ষা পরিষেবাসহ অরক্ষিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া তাদের শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নির্ভরতা তৈরির জন্যও অস্ট্রেলিয়া চিন্তা-ভাবনা করছে।'

তিনি আরও জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করতে অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, উদার এবং নমনীয় মানবিক নিষ্পত্তি কর্মসূচির জন্য অস্ট্রেলিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যা অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সুরক্ষার বাধ্যবাধকতা পূরণ করে।
 
তিনি জানান, মানবিক কর্মসূচির অধীনে রোহিঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ৪৭০টিরও বেশি ভিসা দেওয়া হয়েছে।

তবে, জাতিসংঘ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার উচিত আরও বেশি অবদান রাখা।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সুরক্ষার বিষয়ক সহকারী হাইকমিশনার গিলিয়ান ট্রিগস বলেছেন, 'অস্ট্রেলিয়ার সেই বোঝা সমানভাবে ভাগ করে নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে।'

তিনি ফেডারেল সরকারকে ক্যাম্পগুলোতে আর্থিক সহায়তা বাড়াতেও দেখতে চান।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে আগুনে অন্তত ২৮৮টি গ্রাম হয় আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে প্রধানত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাস করে। নৃশংস হামলাটি ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের সূত্রপাত ঘটায়। কয়েক লাখ মানুষ পালিয়ে গিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। 

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী এ বছরের জুলাইয়ের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা স্থবির হয়ে পড়েছে। মূলত ২০২১ সালে মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের কারণে সেখানে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করে।

চলতি মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে যান। ১৭ আগস্ট তিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে শুনেছেন যে তারা মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান তবে, শুধু পরিস্থিতি ঠিক হলেই।

'দুর্ভাগ্যবশত সীমান্তের ওপারের বর্তমান পরিস্থিতি ফেরত দেওয়ার জন্য সঠিক নয়' বলেছিলেন মিসেস ব্যাশেলেট।

গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক ৪  গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নিন্দা করেছিলেন।

'মিয়ানমারে ৪জন গণতন্ত্রপন্থী কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় অস্ট্রেলিয়া হতবাক এবং মিয়ানমারের সামরিক শাসনের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়', বলেছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের একজন মুখপাত্র এসবিএস নিউজকে বলেছেন, 'ফেডারেল সরকার রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির একটি টেকসই সমাধানের জন্য গুরুত্বের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।'

অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সংযম প্রদর্শন, আরও সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।

কিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Fire service & civil defence: High-risk job, low pay

Despite risking their lives constantly in the line of duty, firefighters are deprived of the pay enjoyed by employees of other departments, an analysis of their organograms shows.

5h ago