রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘদিনের দাবি

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে ছিল। পাশাপাশি, তাদেরকে সমর্থন জানাতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটকে (বিমসটেক)  তাদের প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সঠিক কাজটিই করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মিয়ানমারের বিবাদমান গোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনার আয়োজন করার এবং রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গত আট বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি। বরং গত বছরের জুলাইয়ের পর থেকে বাংলাদেশে আরও বাড়তি এক লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণেই মূলত তারা পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, বিমসটেকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে এই দীর্ঘমেয়াদী সংকট নিয়ে আলোচনা হওয়া খুবই জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই সংকটের সমাধান না করে ফেলে রাখলে পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। 

বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশের দখল নিয়ে নেয়। সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এই প্রেক্ষাপটে, প্রধান উপদেষ্টা রাখাইন রাজ্যে একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন, যার মাধ্যমে মানুষের কাছে জরুরি পণ্য সরবরাহ করা যাবে এবং তারা যাতে আর বাস্তুচ্যুত না হয়, তা নিশ্চিত করা যাবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে একটি প্রশ্ন জাগে: রাখাইন রাজ্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ বাস্তবসম্মত?

জানা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রাথমিকভাবে প্রত্যাবাসনের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ২০১৮ থেকে ২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এই তালিকাটি মিয়ানমারকে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ নিশ্চিত করেছেন, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। তাদের ছবি ও নাম যাচাই করা হলে প্রক্রিয়াটি পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মূল তালিকার বাকি সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হবে। মিয়ানমারের কাছ থেকে আসা এসব আশ্বাস অবশ্যই আশা জাগানিয়া। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে সফল করতে হলে নি:সন্দেহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্যোগ প্রয়োজন। 

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারকে অবশ্যই রাখাইন রাজ্যে একটি অনুকূল ও সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা সেখানে নিরাপদে ফিরে যেতে পারেন। তাদের জন্য পূর্ণ নাগরিকত্ব, চলাফেরার স্বাধীনতা, কাজের সুযোগ ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে আছে। সঙ্গে বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় বাড়তি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে, যত দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে, ততই তা বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য ভালো হবে।   

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump won't say if US will strike Iran, but says it's 'late to be talking'

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

1d ago