৪ বছরের প্রকল্পের বাকি ৪ মাস, এখন পরামর্শক নিয়োগ

স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের ২টি প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হওয়ার ৪ মাস আগে এসে কেবল পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছে।

গতকাল সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো যৌথ উদ্যোগে আগামী ১১ মাসের মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, বিস্তারিত নকশা ও দরপত্রের নথি প্রস্তুত করবে।

এর অর্থ এই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির সময়সীমার শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে গিয়ে কেবল প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হবে।

পরামর্শদাতারা তখন ৪ বছরের জন্য নির্মাণ তত্ত্বাবধান পরিষেবা সরবরাহ করবে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে প্রকল্প দুটির সময়সীমা আরও ৪ বছরেরও বেশি সময় বাড়ানোর দরকার পড়বে। প্রকল্প ২টি হলো পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটার গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর ও খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত একটি ডাবল লাইন নির্মাণ।

শুধু এ ২টি প্রকল্পই নয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে যে ৩৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার বেশিরভাগই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে আছে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ বাড়াতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলো ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে ভারতীয় এলওসি ও অনুদানসহ ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং সেগুলোর সবকটিই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পে দেরি হওয়ার বিস্তারিত কারণ তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ভারতের পক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়ার জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়াও দেরি হওয়ার একটি কারণ।'

'দেরি হওয়ায় আমরা দুঃখিত। কিন্তু, মূল বিষয় হলো চুক্তিগুলো সই হয়েছে। ফলে এখন প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হবে', বলেন তিনি।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ১ বছরের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা সম্পন্ন করার জন্য ১ বছরের মতো সময় লাগবে। এরপরেই আসলে প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় সম্পর্কে জানা যাবে। তাই আপাতত ১ বছরের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরপর প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে ব্যয় ও সময় কী পরিমাণ বাড়তে পারে, তা জানার পরে প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করতে হবে।'

খুলনা-দর্শনা রুটে বর্তমান যে লাইন আছে, সেটির সমান্তরালে আরেকটি লাইন নির্মাণের জন্য সরকার ২০১৮ সালের মে'তে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ঋণ হিসেবে খরচের ৭৭ শতাংশ দেবে ভারত।

ঢাকা-খুলনা ও খুলনা-চিলাহাটির রুটে পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। ঢাকা-খুলনা লাইনের বিদ্যমান খুলনা-দর্শনা অংশটি ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন।

প্রকল্পের নথি অনুযায়ী, এর আওতায় ১৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১২৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন তৈরি করে এই রুটটিকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করা হবে।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু, মাত্র ১টি সংস্থাকে শর্টলিস্ট হওয়ায় একই বছরের আগস্টে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। ইন্ডিয়ান এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদন না পাওয়ায় দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাও বাতিল হয়।

অবশেষে গতকাল রেলওয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এসটিইউপি কনসালটেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড ও এএআরভিইই অ্যাসোসিয়েটস আর্কিটেক্টস ইঞ্জিনিয়ার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেডের সমন্বয়ে গঠিত একটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটি তাদের ৫৯ মাসের পরামর্শ সেবার জন্য ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পাবে।

এদিকে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৭ কিলোমিটার মিটার-গেজ লাইনকে ডুয়েল গেজে পরিণত করার জন্য অন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় রেল নেটওয়ার্ক উন্নত করা ও বাণিজ্য বাড়ানো। এতে ব্যয়ের ৮১ শতাংশে অর্থায়ন করার কথা রয়েছে ভারতের।

এ প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নির্বাচন করতে সাড়ে ৩ বছর সময় নেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রেলওয়ে ৭৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একই জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানিকে এই প্রকল্পের জন্যও নিয়োগ দেয়।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, 'দেশের রেল নেটওয়ার্ক ২টি গেজে বিভক্ত। পূর্ব জোনে মিটার গেজ ও পশ্চিমে ব্রড গেজের আধিপত্য রয়েছে।'

তবে সব মিটার গেজ লাইনকে ক্রমান্বয়ে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ভারত ইতোমধ্যেই তাদের প্রায় সব লাইনকেই ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তর করেছে।'

পার্বতীপুর-কাউনিয়া প্রকল্প বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, 'প্রকল্পটি শেষ হলে এটি কেবল ভারতের সঙ্গেই নয়, ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে এবং এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকে আরও বাড়বে।'

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ও ইন্ডিয়ান এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments