প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্প

ওয়াসা

ঢাকা ওয়াসার পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগারের উদ্বোধন হয় ৩ বছর আগে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় সরবরাহ করা।

কিন্তু প্রকৃত সক্ষমতার তুলনায় এই পরিশোধনাগার থেকে অনেক কম পরিমাণ পানি সরবরাহ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়াসার এসব উচ্চাভিলাষী কিন্তু প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ প্রকল্পগুলোর কারণেই পানির দাম ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ওয়াসা আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে অন্তত ২৫ শতাংশ ও বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

এ মুহূর্তে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিটের (১ হাজার লিটার) দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ৪২ টাকা।

ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর চাপ কমাতে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা খরচ করে ওয়াসা এই পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ করেছে। ২০১৯ সালের জুনে এর উদ্বোধন হয়।

কিন্তু এখনো এই প্রকল্পের মূল সেবা লাইনগুলো বসাতে সক্ষম হয়নি ওয়াসা। তাই সক্ষমতা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না এই পরিশোধনাগার।

এর সক্ষমতা দিনে ৪৫ কোটি লিটার হলেও ওয়াসা কাগজেকলমে উৎপাদনের পরিমাণ দেখাচ্ছে ২৮ কোটি লিটারের মতো। 

তবে ওয়াসা সূত্র জানায়, প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ এর এক তৃতীয়াংশ।

ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতে কয়েকটি পানি পরিশোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা। তবে একইসঙ্গে সংস্থাটি গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়িয়েছে। 

স্ট্যান্ডবাই নলকূপসহ ওয়াসার মোট নলকূপের সংখ্যা এখন ১ হাজার ২৯টি। ২০০৯ সালে গভীর নলকূপের সংখ্যা ৫৬০ ছিল।

নাম না প্রকাশের শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পদ্মার পরিশোধনাগার প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ঢাকায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বর্তমান অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। 

৫২৩ কোটি টাকার নতুন পাইপলাইন নেটওয়ার্ক তৈরির এ প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য এখনো বিদেশি তহবিল খুঁজছে ওয়াসা।

২০২০ সালের মে মাসে প্রকাশিত ঢাকার মাসিক পানি-উৎপাদন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরিশোধনাগারের গড় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দিনে ১৪ কোটি ৮০ লাখ লিটার।

২০২১ সালের নভেম্বরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে ২৭ কোটি লিটার হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে সরবরাহ লাইনে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি।

পরিশোধনাগারের উৎপাদনের পূর্ণ সক্ষমতা দিনে ৪৫ কোটি লিটার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জশলদিয়া থেকে পুরান ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত পাইপলাইনটির ব্যাস ২ মিটার।

লাইনটিকে সায়দাবাদ পানি পরিশোধনাগারের পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তবে এই পাইপলাইনের ব্যাস মাত্র ৬০০ মিলিমিটার। ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ কারণেই মূলত সক্ষমতার তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ পানি সরবরাহ হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

ওয়াসার ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট ব্যাসের পাইপলাইনের কারণে এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোহাম্মদপুর হয়ে মিটফোর্ড থেকে শ্যামলী পর্যন্ত প্রস্তাবিত ২ মিটার ব্যাসের বণ্টন লাইন নির্মাণ হলে আমরা পূর্ণ সক্ষমতার উৎপাদন পাব।'

ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) এ কে এম শহীদ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওয়াসার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত তথ্যকে সমর্থন করে জানান, বিদেশি তহবিলের অভাবে তারা মূল সরবরাহ লাইনের কাজ এখনো শুরু করতে পারেননি।

তিনি জানান, শিগগির পানি উৎপাদনের পরিমাণ দৈনিক ২৯ কোটি লিটারে উন্নীত হতে পারে, কারণ ইতোমধ্যে মিটফোর্ড থেকে ইংলিশ রোডের মাঝে ৫টি পৃথক জায়গার পুরোনো পাইপলাইনের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।

শহীদ উদ্দিন জানান, এই পাইপলাইনের ব্যাস ৬০০ মিলিমিটার থেকে ১ মিটারের মধ্যে।

তিনি আরও জানান, পুরোনো ঢাকার পাইপলাইনগুলো প্রতিস্থাপন করে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।

প্রকৃত সক্ষমতা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করাই ওয়াসার লক্ষ্য, জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়াসার অনেক প্রকল্প উচ্চাভিলাষী। যেহেতু কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো দিতে পারছে না, বাসিন্দারাও এসব প্রকল্পের পূর্ণ সুফল পাচ্ছেন না।'

সরকারের উচিৎ প্রকল্পগুলোর ওপর কড়া নজরদারি বজায় রেখে সেগুলোর উপযোগিতা যাচাই করা,' বলেন তিনি।

রাজধানীর আশেপাশে ৪-৫টি নদী থাকা সত্ত্বেও ওয়াসা পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে পানি আনছে। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এই পরিকল্পনাবিদের

তিনি বলেন, 'ওয়াসার উচিত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও অন্যান্য কাছের নদীগুলোর দিকে নজর দেওয়া। এতে খরচ কমবে এবং নদীগুলো থেকে দূষণ কমাতে বাধ্য হবে সরকার।'

তিনি আরও বলেন, 'ওয়াসার অভ্যন্তরে প্রচুর দুর্নীতি রয়েছে, যার ছাপ পড়েছে প্রকল্পে এবং এর ফলে প্রকল্পগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত খরচ দেখানো হচ্ছে। সরকারকে এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।'

'তাতে অন্তত ২০ শতাংশ খরচ কমবে', যোগ করেন তিনি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

16h ago