চালের কেজি সর্বনিম্ন ৫০-৫২ টাকা, আধা পেট খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

চালের দাম বাড়ায় কষ্ট বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ছবিটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমন্ডল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

আজমত আলী (৫০) পেশায় একজন দিনমজুর। নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘরে। সংসারে স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও ৩ সন্তান রয়েছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কষ্ট বেড়েছে আজমত আলীর সংসারে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমন্ডল এলাকার বাসিন্দা আজমত আলীর কষ্টের শেষ নেই। তাদেরকে এখন এক বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। কখনো কখনো আধা পেট খেতে হচ্ছে।

আজমত আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি প্রতিকেজি মোটা চাল ৪৪-৪৫ টাকা কেজিদরে কিনেছিলেন। এখন এই চাল কিনতে হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা। রাতারাতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম হতাশ হয়েছেন তিনি। এখন সংসার চালাতে দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।

'আমার আয় বাড়েনি। আগে দিনমজুরি করে ৩০০ টাকা মজুরি পেতাম। এখনো একই মজুরি পাচ্ছি। শুধু বেড়েছে সংসারের খরচ। শুধু চালের দাম বাড়েনি। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। নিদারুণ কষ্টে দিন যাচ্ছে আমাদের,' তিনি বলেন।

একই গ্রামের দিনমজুর সহির আলী (৫৪) ডেইলি স্টারকে জানান, তার ৫ জনের সংসারে প্রতিদিন আড়াই কেজি চাল লাগতো। এখন চাল কিনছেন ২ কেজি। এ কারণে পরিবারের সবাইকে আধা পেট খেতে হচ্ছে। অনেক সময় তরকারি কেনার সামর্থ্য হয় না। অসুখ-বিসুখ হলে ওষুধ কেনার জন্য ধারদেনা করতে হচ্ছে।

তার ভাষ্য, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কষ্ট বেড়েছে। ঘরে ভাত থাকলে লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। এতে জীবন বাঁচানো যাবে। কিন্তু চাল কিনতে না পারলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে।'

লালমনিরহাট পৌরসভার খোচাবাড়ি এলাকার দিনমজুর দুলাল হোসেন (৪৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আয় বাড়েনি বরং আগের থেকে আয় কমেছে। এখন নিয়মিত কাজও জুটছে না। কিন্তু সংসারের খরচ বেড়েছে অনেক। সংসার চালাতে পারছেন না। এখন আমাদেরকে একবেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'এখন যা আয় করছি তা দিয়ে চাল কিনলে তরকারি কিনতে পারছি না। তরকারি কিনলে চাল কিনতে পারছি না। মাছ, মাংস আমাদের কপাল থেকে উঠে গেছে। এখন দুমুঠো অন্ন খেয়ে বেঁচে থাকাটা আমাদের জন্য দুষ্কর।'

কুড়িগ্রাম শহরের স্টেশনপাড়া এলাকার রিক্সা চালক নুর ইসলাম (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চালসহ সব জিনিসপত্রের দাম রাতারাতি বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। কিন্তু সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনাহার-অর্ধাহার আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে।'

লালমনিরহাট শহরের গোশালা বাজারে চাল ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে নিম্নমানের চাল প্রতিকেজি ৪৪-৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা দরে। মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৫-৫৭ টাকা কেজিদরে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। উন্নত চাল বিক্রি হয়েছিল ৬৫-৬৭ টাকা কেজিদরে কিন্তু এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা। আমরা চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। কেজি প্রতি ১-২ টাকা লাভ করে চাল বিক্রি করছি। চাল মিল মালিকরা চালের দাম বেশি নিচ্ছেন।'

লালমনিরহাট শহরের চাল মিল মালিক আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে ধানের দাম বেড়ে গেছে। আমাদেরকে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক মজুরি খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হচ্ছি বেশি দামে চাল বিক্রি করতে। আগের থেকে প্রতিকেজি চাল উৎপন্ন করতে আমাদেরকে ৪-৫ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

16h ago