সিনেটে স্বাস্থ্যসেবা-জলবায়ু বিল পাস, বাইডেন প্রশাসনের বড় জয়

সদ্য পাস হওয়া বিলটি জো বাইডেনের প্রশাসনের জন্য বড় একটি জয়। ফাইল ছবি: এপি
সদ্য পাস হওয়া বিলটি জো বাইডেনের প্রশাসনের জন্য বড় একটি জয়। ফাইল ছবি: এপি

সিনেটে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রস্তাবিত ঐতিহাসিক ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্যসেবা, কর ও জলবায়ু বিল পাস হয়েছে।

গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে ভোটের মাধ্যমে বিলটি পাস হয়। একে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার দলের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

আজ সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিলের পক্ষে ও বিপক্ষে ৫০টি করে ভোট পড়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোটে অচলাবস্থার অবসান ঘটে।

বিলটি পাস হওয়ায় ডেমোক্র্যাট পার্টি আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেল।

'মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন' নামে পরিচিত এই বিলটি এ যাবৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জলবায়ু খাতে সবচেয়ে বড় আকারের বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

প্রতিবেদন অনুসারে, এ বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বড় পরিবর্তন আসছে। প্রথমবারের মতো, সরকার কিছু দামি ওষুধের ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীদের সঙ্গে মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করতে পারবে।

এ ছাড়াও, স্বাস্থ্যবিমা খাতে ভর্তুকি বাতিলের সময়সীমাও বাড়ানো হচ্ছে।

এই আইনে বড় শিল্পখাতের জন্য ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর ও নিজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজার থেকে আবারো কেনার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ করের বিধান রাখা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সেবার (আইআরএস) রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে।

এসব উদ্যোগে সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ কমতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এই বিলের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের মধ্যে ৭০০ বিলিয়ন ডলার সরকারি রাজস্ব আসবে এবং এই সময়সীমার মধ্যে কার্বনের নিঃসরণ কমাতে ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের ভর্তুকির সময়সীমা বাড়াতে ৪৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে। বাকি অর্থ ঘাটতি মেটাতে ব্যবহার করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা

নতুন এই বিল মূল্যস্ফীতি কমাতে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ থাকলেও, এটি কার্বন নিঃসরণ কমাবে, সে বিষয়ে মোটামুটি সবাই একমত।

ঐতিহাসিক 'বিশুদ্ধ বায়ু আইন' পাসের পর পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ-রক্ষা আন্দোলনকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়।

বিশেষত, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে দেশটিতে তাপদাহ ও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় এটি জরুরি উদ্যোগ।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমারের কার্যালয়ের ভাষ্য ও একাধিক নিরপেক্ষ বিশ্লেষকের মতে, এই বিলে উল্লেখিত উদ্যোগগুলো ঠিকমতো কার্যকর হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪০ শতাংশ কমবে।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার। ফাইল ছবি: এপি
ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার। ফাইল ছবি: এপি

বিলে বিদ্যুতের খরচ কমাতে বেশ কয়েক ধরনের প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। টেকসই জ্বালানির ব্যবহার ও মার্কিন বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবহার (অন্যান্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানির পরিবর্তে) বাড়াতে এসব প্রণোদনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্লেষকদের বিশ্বাস।

স্বাস্থ্যসেবা ও করের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

এই বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকার ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কিছু দামি ওষুধের দাম কমাতে পারবে। বিশেষ করে, যেসব ওষুধ ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করেন বা ফার্মেসিতে নিয়মিত বিক্রি হয়।

'ওবামাকেয়ার' নামে পরিচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে চালু হওয়া স্বাস্থ্যবিমা সেবার ক্ষেত্রেও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে এই বিলে। শুরুতে ২০২৪ সালে এই ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এই সময়সীমা ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের অংশীদারদের কাছে প্রকাশিত আয়ের বিপরীতে নূন্যতম ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এই উদ্যোগ থেকে আগামী ১০ বছরে বাড়তি ২৫৮ বিলিয়ন আসবে বলে প্রত্যাশা করছে বাইডেন প্রশাসন।

বিলের সমালোচনা

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট সিনেটর জো ম্যানচিন সিএনএনকে বলেন, 'আমার ধারণা, সবাই এই বিল থেকে উপকার পাবো। দেশেরও উপকার হবে। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা আসবে। ভবিষ্যতকে মাথায় রেখে আমরা এই খাতে আরও বিনিয়োগের সক্ষমতা অর্জন করবো।'

সিনেটে সংখ্যালঘু রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল গণমাধ্যমকে জানান, এই বিলে 'বড় আকারের কর আরোপের প্রস্তাব আসছে, যার কারণে অনেকে চাকরি হারাতে পারেন।'

রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল। ফাইল ছবি: এপি
রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল। ফাইল ছবি: এপি

তার মতে, এটি 'নিজ দেশের জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার' সমতুল্য।

কেনটাকির এই নেতা আরও জানান, এই বিলে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে আমলে নেওয়া হয়নি।

ম্যাককনেল বলেন, 'দ্রুত বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির প্রতিক্রিয়ায় তারা এমন বিল তৈরি করলেন। অথচ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি মূল্যস্ফীতি কমাতে তেমন ভূমিকাই রাখবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'মার্কিন জনগণ জানে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনগুলো। পরিবেশগত নীতিমালা সমস্যার মাত্র ৩ শতাংশ। জনগণ মূল্যস্ফীতি, অপরাধ ও সীমান্তের সমস্যাগুলোর সমাধান চায়।'

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago