নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবি সিপিবির

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবি সিপিবির।
ছবি: সংগৃহীত

সংখ্যানুপতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রার্থীর প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নেওয়া, 'না' ভোট- জনপ্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিধান প্রণয়ন, নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার ও ওই সরকারের কাজ সুনির্দিষ্টকরণ এবং নির্বাচনকে টাকা-পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি, সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।  

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 'নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া এখনকার বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার যেন কোনো প্রকারে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক রক্ষা কবজ থাকাও অপরিহার্য।'

এতে আরও বলা হয়, 'অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে একটি স্বাধীনও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি কর্তব্য।'

সংবাদ সম্মেলনে ওই ৪টি বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান যুক্ত করা, নির্বাচনী বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়াসহ নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন বাতিলসহ আইন লঙ্ঘনকারীদের আটক ও কারাদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়।

নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার ও ওই সরকারের কাজের বিষয় সংবিধানে সুনির্দিষ্ট করার দাবি জানানো হয়। নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স। বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ্ আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড শামসুজ্জামান সেলিম, কমরেড এ. এন. রাশেদা, কমরেড শাহীন রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ, কমরেড ডা. ফজলুর রহমান, কমরেড আহসান হাবীব, কমরেড রুহুল আমিন, কমরেড ডা. সাজেদুল হক, কমরেড লুনা নূর, কমরেড আবিদ হোসেন, কমরেড মানবেন্দ্র দেব, কমরেড লাকী আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 'নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক বিধিবিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া, দলের কর্মকর্তাদের নিয়মিত নির্বাচন, দলের আর্থিক বিবরণ নির্বাচন কমিশনকে প্রদান ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব বিষয়ে যাচাইয়ের ব্যবস্থা ও কোনো রকম লঙ্ঘনের ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।'

'নির্বাচনী আচরণ বিধিতে যা আছে, তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তার জন্য অঙ্গীকার ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করতে হবে', যোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা চালুরও আহ্বান জানানো হয়।

প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়, 'রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রার্থী হতে হলে, তাকে কমপক্ষে ৩ বছর দলের সদস্যপদ নিয়ে এবং জনগণকে অবহিত রেখে দলের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী বা যুদ্ধাপরাধী হলে, নিজে অথবা পরিবারের কেউ ঋণখেলাপী কিংবা ঋণখেলাপীর জামিনদার হলে, কালো টাকার মালিক বলে বিবেচিত হলে, সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ অথবা চাকুরিচ্যুতির বছর ৩ বছর অতিক্রম না করলে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রেও এই বিধি প্রযোজ্য হবে।'

ইভিএমে ভোট ছিনতাই ও টেম্পার সম্ভব বলে উল্লেখ করে বলা হয়, 'বাংলাদেশে ব্যবহৃত ইভিএমে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা আপত্তি উঠলে ভোট পুনঃগণনার সুযোগ নেই। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।'

নির্বাচন কমিশনে না যাওয়ার বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, 'প্রথমত, এ ধরনের মতবিনিময়ে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো যুক্তিযুক্ত হতো বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশন এটা করেনি। এ ধরনের মতবিনিময় সভায সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকায় মতবিনিময় বিশেষ কোনো ফল আনবে বলে আমরা মনে করি না। দ্বিতীয়ত, আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা সময়ের সঙ্গে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এ ছাড়া, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ইভিএমসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।'

'নির্বাচন কমিশনের এসব কথার মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা পর্যাপ্ত ও ইভিএম মেশিনের ব্যবহারকে প্রশ্নাতীত করে তোলা হয়েছে। অথচ ইভিএম মেশিন ব্যবহারে অধিকাংশ অংশীজন একমত হননি। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের এই মতবিনিময় নিছক অন্যদের কথা শোনা ও নিজেদের কথা গেলানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই করবে না। তাই এই মতবিনিময়ে অংশগ্রহণের প্রয়োজন আমরা মনে করিনি', বলেন সিপিবি নেতারা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

5h ago