‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে সত্য গোপন করা হয়েছিল’

রনিল বিক্রমাসিংহে। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন যে তার পূর্ববর্তী সরকার দেশের আর্থিক সংকটের বিষয়ে 'তথ্য গোপন' করেছিল।

গতকাল সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন'কে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

রনিল বলেন, 'সাবেক গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রশাসন সত্য বলেনি। শ্রীলঙ্কা "দেউলিয়া" হয়ে গিয়েছিল এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহযোগিতা চাওয়া প্রয়োজন ছিল।'

'আমি বলতে চাই যে আমি জানি দেশের জনগণ কতটা কষ্টে আছেন,' যোগ করেন তিনি।

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

তার মতে, 'আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। নিজেদেরকেই নিজেদের টেনে তুলতে হবে। তাতে আমাদের ৫ বা ১০ বছরের বেশি লাগবে না।'

আগামী বছরের শেষ নাগাদ দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'অবশ্যই ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের অর্থনীতি কার্যকর হয়ে উঠবে।'

সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে যাওয়ায় এবং পদত্যাগ করায় সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গত ১৩ জুলাই শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার প্রথম সাক্ষাৎকার।

বিক্রমাসিংহে জানান, রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কা থেকে মালদ্বীপ এবং পরে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কথা হয়েছে।

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনো সিঙ্গাপুরে আছেন কি না, কিংবা অন্য কোথায় আছেন তা জানেন না বলে দাবি করা বিক্রমাসিংহে দেশটির পরবর্তী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশা করছেন।

আগামী বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্তত ৩ প্রার্থীর সঙ্গে ৬ বারের প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহেও এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

তার মনোনয়ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।

গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে। খাবার ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে না পারায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। নেতাদের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে জনগণ।

বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ভাঙচুর চালায়, আগুন দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের বাড়িতেও।

বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে দেশত্যাগ করেন। গত ৯ জুলাই জাতীয় সরকারের পথ তৈরি করতে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী রনিল।

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

বাড়িতে আগুন প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি সিএনএন'কে বলেন, 'আগুনে যা নষ্ট হয়েছে, তার বেশিরভাগই উদ্ধার করা সম্ভব নয়।'

তিনি জানান, ৪ হাজারের বেশি বই ও প্রায় ১২৫ বছর পুরনো পিয়ানো পুড়ে গেছে।

শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিজেকে সাবেক প্রশাসনের কেউ নন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, 'আমি আগের প্রশাসনের কেউ নই, জনগণ তা জানে। আমি দেশের অর্থনীতি সামলাতে এসেছি।'

কেন প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং নিজেকে যোগ্য মনে করেন?—রনিল বলেন, 'আমি চাই না যে দেশে যা হলো, তেমন আবার ঘটুক। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা অন্য কারো সঙ্গে হোক। অবশ্যই আমি ভাবি না যে এসব অন্য কারো সঙ্গে হবে।'

দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়ায় শ্রীলঙ্কানদের জীবন এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়ে গেছে। জ্বালানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাস স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে এবং সুপারমার্কেটে পণ্য সরবরাহ নেই।

জনগণের ক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'জনগণ "শান্তিপূর্ণভাবে" প্রতিবাদ করতে পারে।' জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পার্লামেন্ট মেম্বার ও পার্লামেন্টকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেবেন না।'

আগামী ২০ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে গণবিক্ষোভ দমনে গতকাল থেকে তিনি দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

বিক্রমাসিংহে বলেন, 'আমরা (পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে) অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি। তারা কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছে। তারপরও আমরা তাদের বলেছি যতটা সম্ভব অস্ত্র ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন।'

শ্রীলঙ্কার জনগণ কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তা তিনি বুঝতে পারেন বলে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি তাদের বলেছি যে ৩টি খারাপ সপ্তাহ গেছে এবং পুরো সিস্টেম ভেঙে পড়েছে।'

'আমাদের গ্যাস ছিল না, ডিজেল ছিল না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল' উল্লেখ করে বিক্রমাসিংহে বলেছেন, 'বিক্ষোভকারীদের বুধবারের নির্বাচনের সময় পার্লামেন্টে কোনো ধরনের বাধা দিতে দেওয়া হবে না। কোনো ভবনে হামলার সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

3h ago