কে এই রনিল বিক্রমাসিংহে

srilanka_t.jpg

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ফলে, তিনি  দেশটির সর্বোচ্চ নেতার ক্ষমতা পেলেন। আজ বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৩৪ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দেশটির পার্লামেন্টের মোট আসন সংখ্যা ২২৫।

চাচা জুনিয়াস জয়াবর্ধনের হাত ধরে রাজনীতিতে পথচলা শুরু তার। প্রেসিডেন্ট চাচার স্বপ্ন ছিল 'একদিনের জন্য' হলেও যেন রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। এবার চাচার সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। 

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার পরে গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন এবং শুক্রবার স্পিকার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দেন। এরপর শ্রীলঙ্কার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এই পদটি বিক্রমাসিংহে কয়েক দশক ধরে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম।

srilanka_1.jpg

ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে কয়েকটি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। বিক্রমাসিংহেও তেমন একটি পরিবারের সদস্য।

দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নেতা জুনিয়াস জয়াবর্ধনের ভাতিজা তিনি। জুনিয়াস জয়াবর্ধনে ১৯৮৯ সালে পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন।

'ওল্ড ফক্স' হিসেবে খ্যাত জয়াবর্ধনে তার চতুরতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে তার ভাতিজা রনিল বিক্রমাসিংহেকে আরও ধূর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৭ সালে রনিল বিক্রমাসিংহেকে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে রাজনীতিতে আনেন জয়াবর্ধনে।

srilanka_3.jpg

তার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফাস্ট পোস্ট বলছে, ১৯৯৬ সালে মারা যাওয়া জয়াবর্ধনে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, বিক্রমাসিংহে যেন 'একদিনের জন্য' হলেও প্রেসিডেন্ট হন।

গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ায় রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কখনো মেয়াদ পূর্ণ না করার রেকর্ড বজায় রেখেছেন।

তিনি ১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু, উভয় নির্বাচনেই হেরে যান এবং ইউএনপি ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। রনিল বিক্রমাসিংহে পার্লামেন্টে এই দলের একমাত্র সদস্য।

srilanka_2.jpg

কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলে তিনি বিরোধীদের টপকে রাজাপাকসের ভাই মাহিন্দা পদত্যাগ করার পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বিক্রমাসিংহে ইংরেজি প্রভাষক মাইথ্রির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের কোনো সন্তান নেই এবং তারা তাদের সম্পত্তি তাদের পুরনো স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দান করেছেন।

তিনি নিজের ২ হাজার ৫০০টিরও বেশি বইয়ের গ্রন্থাগারকে সবচেয়ে 'বড় সম্পদ' বলে মনে করতেন রনিল। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিলে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত একটি ধনী ও রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিক্রমাসিংহে। পারিবারিক সংবাদপত্রে শিক্ষানবিশ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু, ১৯৭৩ সালে বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সিরিমা বন্দরনায়েক তাদের পারিবারিক ফার্মটি জাতীয়করণ করেন এবং লেক হাউস সরকারের দখলে যায়। ফলে, সাংবাদিকতা ছেড়ে রনিল বিক্রমাসিংহেকে আইনি পেশায় ফিরে যেতে হয়।

srilanka_4.jpg

বিক্রমাসিংহে একবার এএফপিকে বলেছিলেন, লেক হাউস যদি দখল না করা হতো, তাহলে আমি সাংবাদিক হতাম। আসলে, মিসেস বন্দরনায়েক আমাকে রাজনীতির দিকে ঠেলে দেন।

১৯৯৩ সালের মে'তে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা নিহত হলে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান বিক্রমাসিংহে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডিবি উইজেতুঙ্গাকে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য বিক্রমাসিংহেকে বেছে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তো হলেন, এবার দরকার চাচার স্বপ্ন পূরণ। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হওয়া। সেই পথে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু, ঠিক ৬ বছর পর একই ধরনের হামলা তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বঞ্চিত করে। সেবার তার প্রধান নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা নির্বাচনের মাত্র ৩ দিন আগে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় আহত হন।

পরে টেলিভিশনের পর্দায় চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার চেহারা জাতিকে অশ্রুসিক্ত করে তোলে এবং তিনি মানুষের সহানুভূতি পান। ফলে, সেই নির্বাচনে হেরে বসেন বিক্রমাসিংহে। কিন্তু, অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি জিতবেন।

এখন রাজনৈতিক চাকা আরও একবার ঘুরে যেতে পারে। কারণ রাজাপাকসেকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগের দাবি করছে এবং প্রেমাদাসার ছেলে সাজিথ আগামী সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বিক্রমাসিংহে দীর্ঘদিন ধরে 'মিস্টার ক্লিন' ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন। তবে, ২০১৫-১৯ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের শেষ দিকে এটি আর ধরে রাখতে পারেননি। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বন্ডের সঙ্গে জড়িত একটি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কেলেঙ্কারির কারণে তার প্রশাসন ধাক্কা খায়।

এ ছাড়া, বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যদের রক্ষার অভিযোগও আনা হয়েছিল। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ, জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ এবং এমনকি হত্যার অভিযোগ তোলা হয়।

বিক্রমাসিংহে একটি দেউলিয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যারা ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়েছে এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানির জন্য অর্থ সংকটে ভুগছে।

অবশ্য পাশ্চাত্যপন্থী, মুক্তবাজার সংস্কারবাদী হিসেবে তার অবস্থান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিদেশি ঋণদাতাদের সঙ্গে বেলআউট আলোচনাকে মসৃণ করতে পারে। কিন্তু, তিনি ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন—দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক দুর্দশার দ্রুত কোনো সমাধান হবে না।

বিক্রমাসিংহে সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছিলেন, 'সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসতে এখনো বাকি আছে। তবে, আমাদের এখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি আছে এবং আমরা দেউলিয়া।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago