কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের বানভাসি

‘এ বছর আমাদের ঈদ নেই, ঈদের প্রস্তুতি নেই’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে পোড়ার চর এলাকা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

শাহাবুল ইসলাম (৪৭) ব্রহ্মপুত্র নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারে স্ত্রী রেহানা বেগম (৪৩), ৪ সন্তান ও মা। এবারের বন্যায় তার ৩ ঘরের মধ্যে ২টিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘর মেরামত জরুরি। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তা পারছেন না। একটি ঘরে সবাই গাদাগাদি করে থাকছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের বুকে পোড়ার চর এলাকার শাহাবুলের সন্তানরা নতুন জামার জন্য কাঁদলেও তাদের আবদার মেটানোর সামর্থ্য নেই।

শাহাবুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আমাদের ঈদ নেই, ঈদের প্রস্তুতিও নেই। গত বছর ছাগল কোরবানি দিয়েছিলাম। এ বছর ঈদের দিন কী খাবো এর কোনো ব্যবস্থা নেই।'

'আমার মাছ ধরার নৌকাটির নষ্ট হয়ে গেছে। ত্রাণের খাবার আর ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

বন্যার পানি বসতভিটা থেকে নেমে গেলেও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার কাছে ২০ হাজার টাকা ঋণ আবেদন করেছেন তিনি। ঋণের টাকা পেলে ঘর ও নৌকা মেরামত করবেন।

তিনি আরও বলেন, 'টাকা যোগাড় করতে পারলে হয়তো বাজার থেকে মাংস কিনে এনে পরিবারের লোকজনকে খাওয়াতে পারবো।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

শাহাবুলের মতোই এই চরে ৮৫ পরিবারের একই অবস্থা। কারো মুখে হাসি নেই। ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেই। পশু কোরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্যবান ব্যক্তি নেই এই চরে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের বুকে ফকিরের চর এলাকার কৃষক তাহের আলী (৬৪)। এবার বন্যায় তার ৫ বিঘা জমির আউশ ধান ও ৪ বিঘা জমির বাদাম ও সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এ বছর কোরবানি দেওয়ার জন্য ছাগল রেখেছিলেন। পরিবারের প্রয়োজনে তা ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'পশু কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা পরিবারের লোকজনের নতুন জামা দিতে পারবো না। এ বছর আমাদের ঈদ নেই। বন্যা আমাদের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।'

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তার বুকে চর গোবর্ধানের কৃষক আক্কেল আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় ৭ বিঘা জমির ফসল ক্ষতি হওয়ায় এ বছর ঈদের প্রস্তুতি নেই। ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করেছিলাম। এখন সেই টাকা পরিশোধ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় আছি।'

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় কুড়িগ্রামে আড়াই লাখ ও লালমনিরহাটে ৭০ হাজার মানুষ বানভাসি হয়েছেন। বন্যার পানি নেমে গেলেও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে এখনো ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি।

ঈদ উপলক্ষে কুড়িগ্রামে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৭০৫ দুঃস্থ ও দরিদ্র পরিবারের জন্য ভিজিএফ ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৪ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন ও লালমনিরহাটে ১ লাখ ৪০ হাজার ১০০ পরিবারের জন্য ১ হাজার ৪০১ মেট্রিক টন চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

এ সহায়তা বানভাসি প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। তবে, তাদের ঈদ উদযাপনে কোন বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভিজিএফ চাল বিতরণে বানভাসিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

5h ago