উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা তোলার অভিযোগ

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় গ্রামীণ অকাঠামো উন্নয়নকাজে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১০টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৭ হাজার ৬২০ টাকা, ৩৬টি প্রকল্পে ২৯২ মেট্রিক টন চাল ও ২৩টি প্রকল্পে ২৩৬ মেট্রিক টন গমে ব্যয় দেখানো হলেও অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোনো কাজ হয়নি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে এই রাস্তার টেকসই কোনো মেরামত হয়নি, শুধু রাস্তার ঘাস ফেলে দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়েছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় গ্রামীণ অকাঠামো উন্নয়নকাজে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১০টি প্রকল্পে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৭৭ হাজার ৬২০ টাকা, ৩৬টি প্রকল্পে ২৯২ মেট্রিক টন চাল ও ২৩টি প্রকল্পে ২৩৬ মেট্রিক টন গমে ব্যয় দেখানো হলেও অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোনো কাজ হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প কমিটিকে সরকারি বরাদ্দের পুরো টাকা দেওয়া হলেও কয়েকটি প্রকল্পে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ও কয়েকটির মাত্র ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এর আগের অর্থবছরগুলোতেও প্রকল্পের টাকা কোনো কাজ না করেই উত্তোলন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ৩ মাসের কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের আব্দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামের দুটি কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামের একজন ওই প্রকল্প কমিটির সভাপতি হন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরিতে ৫৪ জন শ্রমিকের এক মাস কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু ১২ জন শ্রমিক মাত্র ৪ দিন কাজ করেই রাস্তা দুটি মেরামত কাজ সম্পন্ন করেন। রাস্তা দুটির টেকসই কোনো মেরামত হয়নি, শুধু রাস্তার ঘাস ফেলে দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়েছে।'

'এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি অর্থ অপচয় করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে লাভবান হচ্ছেন রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারি ও কিছু দালাল,' অভিযোগ করেন তিনি।

একই ইউনিয়নের ভাড়ালদহ গ্রামের নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, '৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কাঁচা রাস্তা ১০ জন শ্রমিক একদিনে সংস্কার করেছেন। আসলে রাস্তাটিতে কোনো মাটি কাটা হয়নি। শুধু রাস্তার ঘাস ফেলে দিয়ে ড্রেসিং করা হয়েছে। এতে আগের ভালো রাস্তাটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে।'

'আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু কোনো কাজে আসেনি,' বলেন তিনি।

একই অভিযোগ করেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামের আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, 'গ্রামে একটি কাঁচা সড়ক সংস্কার করার জন্য সরকার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শুনেছি কাজ না করেই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।'

'এভাবে কাজ না করেই প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প জনসাধারনরে কোনো উপকারে আসছে না,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো এভাবেই হয়ে আসছে।'

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ করেন তিনি।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব প্রকল্পের ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কমিটির সভাপতি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৬০-৬৫ শতাংশ চলে যায় রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তার পকেটে। বাকি টাকা দিয়ে প্রকল্পের কাজ সম্ভব হয় না। এ কারণে ২০-৩০ শতাংশ কাজ করা হয়। কোনো কোনো প্রকল্পে কোনো কাজই করা হয় না।

জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অবগত রয়েছেন। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। অনেক প্রকল্পে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে।'

বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা মাসুম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বরাদ্দের টাকা যেন ফেরত না যায় সেজন্য চুক্তি সাপেক্ষে প্রকল্পের বিল উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাছ থেকে ব্যাংকের ড্রাফট নিয়ে রাখা হয়েছে। চলতি জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে প্রকল্প কমিটিকে কোনো বিল দেওয়া হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

'আমি নিজেই প্রকল্প পরিদর্শন করবো। শতভাগ কাজ বুঝে নিয়ে বিল দেবো,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

13h ago