নারীর মরদেহ উদ্ধার: আগেও সেই বাসায় গিয়েছিলেন সন্দেহভাজন হত্যাকারী

savar_killing_2jul22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

সাভার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিনদবাইদ এলাকার একটি বাড়ির মালিক হাজেরা খাতুনের সন্দেহভাজন হত্যাকারীর পরিচয় শনাক্তে আটকে আছে মামলার রহস্য।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলে স্টারকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি বোরকা পরা ওই নারীই হত্যাকারী। তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হলেই বাকি রহস্যের জট খুলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, থানা পুলিশের পাশাপাশি অপরাধ তদন্ত বিভাগ এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়া তদন্ত করছে।

যা আছে সিসিটিভি ফুটেজে

গত মঙ্গলবার হাজেরা খাতুনের হাত-পা ও মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী সাইদুল রহমানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বোরকা পরা এক নারী ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনি যখন ৪ তলার ফ্ল্যাটে যান সাইদুল তার সঙ্গেই ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তারা সাইদুলকে চলে যেতে বলেন।

সাইদুল আরও জানান, সে সময় ছাদে মিস্ত্রি কাজ করছিল। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। গৃহকর্মী জানালে ৪ তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে সাইদুল দেখেন হাজেরার হাত দড়ি দিয়ে, পা ওড়না দিয়ে বাঁধা এবং মুখে স্কচটেপ পেঁচানো। বোরকা পরা সেই নারী নেই। মিস্ত্রির সহায়তায় বাঁধন খুলে সাইদুল বুঝতে পারেন হাজেরা মারা গেছেন। তখন তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান।

এই তথ্য সত্যতা যাচাইয়ে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে। এ ছাড়া, আলামত হিসেবে ওড়না, দড়ি ও স্কচটেপ, মেঝেতে পড়ে থাকা চুল সংগ্রহ করেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা প্রকৃত সময়ের চেয়ে ৩৬ মিনিট এগিয়ে ছিল। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে (প্রকৃত সময় ১১টা ২৯ মিনিট) সন্দেহভাজন হত্যাকারী ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। নিচ তলায় প্রবেশ করে তিনি নিরাপত্তারক্ষীর চৌকিতে বসেন। সেখানেই ৩ তলার ভাড়াটিয়া রেবা খাতুনের সঙ্গে তার কথা হয়। সে সময় সাইদুল উপর তলা থেকে নেমে এসে বাইরে চলে যান। ফিরে আসেন ১২টা ৫৩ মিনিটে। এরপর রেবা খাতুন, সাইদুল ও বোরকা পরা নেই নারী উপর তলায় যান। ১২টা ৫৫ মিনিটে সাইদুল ও সেই নারী হাজেরার ৪ তলার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। সাইদুল ফ্ল্যাট থেকে ১টা ৩৫ মিনিটে বের হয়ে আসেন। ওই নারী বের হয়েছিলেন ২টা ৪৬ মিনিটে।

আগেও সেই বাসায় গিয়েছিলেন সন্দেহভাজন হত্যাকারী

রেবা খাতুন জানান, চা খাওয়ার জন্য তিনি ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমেছিলেন। সে সময় বোরকা পরা ওই নারী বাড়িতে প্রবেশ করেন। বাসা ভাড়া নেবেন বলে তিনি মালিকের সঙ্গে দেখা করতে চান। নিরাপত্তাকর্মী চেক হাতে নিচে নেমে আসেন এবং বসতে বলে বেরিয়ে যান।

তিনি বলেন, 'আমি ওই নারীর সঙ্গে কথা বলতে থাকি। সাইদুল ফিরে এলে আমরা ৩ জন একসঙ্গে উপরে উঠি। আমি আমার ফ্ল্যাটে চলে আসি, সাইদুল ওই নারীকে নিয়ে হাজেরা আপার ফ্ল্যাটে যান।'

ওই নারীর সঙ্গে কী কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে রেবা বলেন, বাসার ভাড়াটিয়ারা কেমন, বাসার মালিক কেমন, এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

সাইদুল যখন ব্যাংকের চেক হাতে নিচে নেমে আসে তখন ওই নারী চেকের দিকে তাকাচ্ছিলেন। টাকার পরিমাণ জানার চেষ্টা করছিলেন। এরপর বলেন এতো অল্প টাকা উঠায় কেন, একবারে তুলতে পারে না—জানান রেবা।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, ওই নারীর বয়স ৫০ বছর কিংবা এর কিছু কম এবং দাঁত উঁচু। আমি শুনেছি তিনি ১ মাস আগেও বাসা ভাড়া নিতে এসেছিলেন, বলেন রেবা।

তবে সাইদুলের দাবি, ১ মাস না ১৫ দিন আগে ভাড়ার জন্য এসেছিলেন ওই নারী। সাইদুল বলেন, আমিই চাচির কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন চাচি আর ওই নারী যেভাবে কথা বলছিলেন, মনে হয়েছিল তারা পূর্বপরিচিত। ৪-৫ দিন পরে চাচিকে প্রশ্ন করেছিলাম তারা পরিচিত কি না। চাচি মনে করেছিলেন তিনি তালিমের (ধর্মীয় শিক্ষা) লোক।

মঙ্গলবার ৪ তলার ফ্ল্যাটে যাওয়ার পরে কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই নারীকে নিয়ে চাচির (হাজেরা খাতুন) ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম। আমার সামনেই বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে আলাপ হয়। চাচি যখন ১ মাসে ভাড়া আগাম চান তখন ওই নারী জানান টাকা সঙ্গে আনেননি। এরপর ওই নারী চাচির সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা বলতে চান। তখন চাচি আমাকে চলে যেতে বলেন। ছাদে রাজমিস্ত্রি কাজ করছিল, আমি সেখানে চলে যাই। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাজের বুয়া (গৃহকর্মী) আয়শা কাঁদতে কাঁদতে এসে জানায়, চাচির হাত-পা ও মুখ বাঁধা, পড়ে আছে। আমি চাচির ফ্ল্যাটে যাই, আমার সঙ্গে মিস্ত্রি চুন্নুও যায়। আমরা দুজন বাঁধন আর স্কচটেপ খুলেছিলাম।

চুন্নু মিয়া দ্য ডেইলি স্টার'র সঙ্গে আলাপকালে একই তথ্য দিয়েছেন।

আয়শা জানান, তিনি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রান্না করতে এসে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পান। ভেতরে হাজেরাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। সাইদুলকে ডাকতে তিনি প্রথমে নিচতলা গিয়েছিলেন। না পেয়ে ছাদে চলে যান।

বুধবার হাজেরা খাতুনের ছোট মেয়ে ডা. তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

তানিয়া বলেন, আমরা ২ বোন ঢাকায় থাকি। বাবা-মা ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। গত ৫ মাস আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা একাই থাকতেন। ৬ তলা বাড়িটি মা এবং আমাদের ২ বোনের নামে।

তিনি বলেন, বোরকা পরা ওই নারীকে আমরা চিনি না। বাসা থেকেও তেমন কিছু চুরি হয়নি। শুধু মায়ের ব্যবহৃত স্যামসাং এ২০ সিরিজের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। ওই ফোনে কোনো সিম ছিল না। অনলাইনে আমরা মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতাম। যেহেতু বাসা থেকে কিছুই চুরি যায়নি তাই বোঝা যাচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago