বড়লেখায় বন্যার পানিতে দুর্গন্ধ, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

অপর্ণা রাণীর পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা হতে শুরু করেছে। ছবি: স্টার

হাকালুকি হাওরপাড়ের বাসিন্দা অপর্ণা রাণীর বাড়ির আঙিনা-রান্নাঘরে পানি। কয়েকদিন ধরে সেই পানি মাড়িয়ে ঘরের কাজ করতে গিয়ে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা হতে শুরু করেছে।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পশ্চিম গগড়া গ্রামের বাসিন্দা অপর্ণা রাণী। একই গ্রামের অনন্ত দাসের ঘরের আশপাশে বন্যার পানি উঠেছে। তাকে চলাচল করতে হচ্ছে পানি মাড়িয়ে। এতে তার পায়ে 'গুটি বসন্ত'র মতো হয়েছে।

দাগ কীভাবে হলো জানতে চাইলে অনন্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার পানিতে সবকিছু ডুবে গেছে। পানিতে দুর্গন্ধ। পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। পানি গায়ে লাগলে চুলকায়। বন্যার পানির কারণে শরীরে বসন্তের মতো দাগ হয়েছে।'

সরকারিভাবে কোনো ওষুধ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, এখনো পাইনি।'

হাকালুকি হাওরপাড়ের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় অনেক মানুষ এখন পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এলাকার মানুষ কোনো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যা ও নানা ধরনের পানিবাহিত রোগের কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে সেসব এলাকার মানুষের। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে সেসব এলাকার অধিকাংশ নলকূপ। ফলে, বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেকে বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্যার পানিতে গোসল করছেন, পান করছেন। এতে তারা পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পর থেকে তাদের কারো জ্বর শুরু হয়েছে। কারো পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে। কারো আবার পায়ে 'গুটি বসন্ত'র মতো দাগ দেখা দিয়েছে।

তালিমপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য গগড়া গ্রামের বাসিন্দা সুজিত দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় তাদের এলাকা তলিয়ে গেছে। ঘরে পানি। পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। পানি লেগে তার পায়ে বসন্তের মতো দাগ, চুলকানি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু আমারই না, এলাকার আরও অনেকের পায়ে এরকম ঘা হচ্ছে। কারো কারো শরীরের দাগ হচ্ছে। কেউ কেউ ডায়রিয়াতে ভুগছেন।'

বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আশ্রয়কেন্দ্রসহ ১৫টি নলকূপের প্লাটফর্ম উঁচু করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মওজুদ আছে। যেখানে দরকার সেখানেই বিতরণ করা হচ্ছে।'

কুলাউড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোহসিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রেসহ ৮ নলকূপের প্লাটফর্ম উঁচু করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ১২ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মওজুদ আছে। যে কেউ যে কোনো মুহূর্তে আমাদের সেবা নিতে পারেন।'

মৌলভীবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যাদুর্গত এলাকায় আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। পানিবাহিত রোগের ওষুধের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ আসলে ওষুধ বিতরণ করব।'

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

4h ago