আবাসিক এলাকার স্কুল থেকে শব্দ দূষণ

বিকট শব্দে হুরমুর করে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। ঢুলুঢুলু চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সাড়ে ৭টা বাজে। বাসার পাশের স্কুলে শিক্ষার্থীরা গান গাইছে। তাদের কণ্ঠস্বর লাউডস্পিকারে বজ্রধ্বনির মতো ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।

এটা অবশ্য নতুন কিছু না। এভাবেই প্রতিদিন সকালে জেগে উঠি আমি এবং এই এলাকার মানুষ। স্কুলের প্রতিদিনের এই সমাবেশ অবশ্য আমাদের এক প্রকার সহ্য হয়েই গেছে। কিন্তু বিরক্তিকর অবস্থা তৈরি হয় যখন স্কুলের কোনো আউটডোর রিহার্সেল, বার্ষিক স্পোর্টস, কোনো বিশেষ দিবস উদযাপনের রিহার্সেল কিংবা উদযাপন হয়।

আবাসিক এলাকাগুলোতে সব বয়সের মানুষই বসবাস করেন। ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, একটি কোলাহলপূর্ণ স্কুলের পাশের বাসায় থাকায় আমার জন্য পড়াশোনা করাও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অযৌক্তিক উচ্চশব্দ মাইগ্রেন, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। আমার মা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। উচ্চশব্দ তার মাথাব্যাথা ও অনিদ্রা বাড়িয়ে দেয়।

এমআইএসটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়ান আবরার বলেন, 'সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় অনেক শোরগোল হয়। সেই সময় পড়াশোনা বলেন আর প্রার্থনা, কোনোটাই ঠিক মতো করা যায় না। আমাদের এলাকার মানুষ অনেকবার অনুরোধ করেছে যাতে নামাজের সময়টাতে অন্তত উচ্চস্বরে গান না বাজানো হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।'

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দিনের বেলায় আবাসিক এলাকার জন্য অনুমোদিত শব্দমাত্রা ৫৫ ডেসিবেল।

কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের আয়োজনগুলো মিলনায়তনের মধ্যে করছে, যাতে শব্দ বাইরে কোনো সমস্যা তৈরি না করে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই উচিত তাদের অবকাঠামোগত পরিকল্পনায় একটি মিলনায়তনের জন্য আলাদা জায়গা রাখা। সেইসঙ্গে স্কুলগুলো হওয়া উচিত তুলনামূলক প্রশস্ত ও গাছপালায় পূর্ণ এলাকায়। যাতে স্কুলের শব্দ স্থানীয়দের জন্য কোনো সমস্যা না হয়।

রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে দেখতে পাবেন, ভবনের দু-একটি তলা ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে স্কুল। অথচ, সেই ভবন তৈরি করা হয়েছিল আপ্যার্টমেন্ট হিসেবে। এভাবে তৈরি স্কুলে পর্যাপ্ত জায়গায় অভাব থাকে। ফলে তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে কোলাহলপুর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আমার বাসার ২ হাজার ৫০০ ফুট ব্যাসার্ধের মধ্যে ৪টি স্কুল।

উত্তরার বাসিন্দা তাসনীম (২০) বলেন, 'আমার বাসার আশেপাশে বেশ কয়েকটি স্কুল আছে। আমাদের সকাল শুরু হয় শিক্ষার্থীদের গাড়ি ও বাসের হর্ণের শব্দ শুনে। বিকালে ও সন্ধ্যায় শিফট অনুযায়ী ক্লাস শেষ হলে শোরগোলের মাত্রা বেড়ে যায়। বাসার যে ঘরেই যাই না কেন এই শব্দ থেকে পরিত্রাণ নেই।'

হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, রাস্তার সাইনবোর্ডে লেখা থাকে 'হর্ণ বাজাবেন না, সামনে স্কুল'। শিক্ষার্থীদেরকে বাইরের শব্দদূষণ থেকে বাঁচানোর জন্য এমন সাইনবোর্ড লাগানো হয়। অথচ শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণেই কোলাহলের মধ্যে থাকে।

স্কুল মাঠের মাইরে যেন শব্দ না যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্কুল কর্তৃক্ষকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া উচিত। সেইসঙ্গে এসব নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা কঠোর নিরীক্ষণ প্রয়োজন।

অনুবাদ করেছেন তাফহিমাহ জাহান

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

4h ago