এবারও বরাদ্দ কমছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায়

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে সুপারিশ করা হয়েছিল তার চেয়ে এবারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) বরাদ্দ কম পেতে যাচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত।

গত চার বছর ধরেই এ দুই খাতে বরাদ্দের এই নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে আগামী বৃহস্পতিবার অনুমোদনের জন্য যে খসড়া উন্নয়ন বাজেট উপস্থাপন করা হতে পারে তাতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ পাবে স্বাস্থ্য খাত। যেখানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এডিপি বরাদ্দের ১১ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশের বিপরীতে খসরা এডিপিতে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে একই ধরনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি খাতে আগের চার অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে কম বরাদ্দ মিলেছে।

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা মানব উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়।

তিনি বলেন, 'আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে শুনেছি যে তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন এমনকি প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা উন্নয়ন বাজেটে এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।'

'আমরা অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি। এগুলো দেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমরা যদি মানুষের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যর্থ হই, তাহলে এসব উন্নয়ন টেকসই হবে না,' বলেন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

দেশ যদি যথাযথভাবে জনগণের সক্ষমতা বিকাশ করতে না পারে তাহলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু তৈরি পোশাক খাতই বিদেশি কর্মীদের কয়েক বিলিয়ন ডলার বেতন-ভাতা দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি না থাকায় এই অর্থ শেষ পর্যন্ত দেশের বাইরে চলে যায়।

জানুয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যবর্তী পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কম বরাদ্দ স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসম্পদে নিম্নমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে এবং এটি জনগণের ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতে কম বরাদ্দ উদ্বেগের বিষয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাত প্রস্তাবিত ৩ শতাংশের বিপরীতে জিডিপির ১ শতাংশের কম বরাদ্দ পাচ্ছে।

পর্যালোচনায় বলা হয়, কম বরাদ্দ বাংলাদেশের মানুষের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। যা মানুষের খরচ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য সেবায় ৭২ শতাংশ বাড়তি খরচ অনেক বেশি। ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় এই ব্যয় অনেক কম।

পর্যালোচনায় বলা হয়, এটি স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চ বৈষম্যের একটি সূচক এবং দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ।

ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করে পরিবার।

শিক্ষায় অর্থায়নের বিষয়টি এখনও মূল সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।

পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে শিক্ষায় সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির মাত্র ১.৬৪ শতাংশ, যেখানে বেশিরভাগ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশগুলো তাদের জিডিপির প্রায় ৫-৬ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যারয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আহমেদ বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সুপারিশ এবং প্রকৃত বরাদ্দের মধ্যে যে ব্যবধান সেটি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের মধ্যে অসামঞ্জস্যকেই দেখায়।

তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্যই হওয়া উচিত। তবে কেবল সচ্ছলরাই এটি বহন করতে পারছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়গুলো অর্থ ছাড় করতে না পারায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কম বরাদ্দ পায়। তারা বলছেন, ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বও এর জন্য দায়ী।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ব্যয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ শতাংশ ও ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩৪ শতাংশ তাদের প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা উচিত নয়। বাজেট বাস্তবায়নে সুশাসন ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান স্বীকার করেছেন যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম এবং তাদের জন্য বাজেট বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, বাজেটের সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এই দুটি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের অনুমতি দিতে পারে না।

মান্নান বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল অনেক সময় সরকারকে অন্যত্র বরাদ্দ কাটছাঁট করতে দেয় না। এখন সময় এসেছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় পুনর্বিন্যাস করার।

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

10m ago