আখাউড়ায় ভেসে গেছে ১০৯ পুকুরের মাছ, ক্ষতি ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা

উপজেলায় ১০৯টি পুকুর তলিয়ে গেছে। ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মোগড়া ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মাছ চাষি জয়নাল আবেদীন। তার ৭টি পুকুরের মধ্যে ৫টিই তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। এসব পুকুরে ২০ লাখ টাকা পুঁজি খাটান তিনি। পোনা ছাড়াও বড় মাছও মজুদ ছিল পুকুরগুলোতে।

সম্প্রতি ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে জয়নালের ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পুঁজি হারিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

পার্শ্ববর্তী মনিয়ন্দ ইউনিয়নের আইড়ল গ্রামের মাছ চাষি বাছির মিয়া। ১৯টি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন তিনি। তার ৬টি পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। এতে তার প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামের বাসিন্দা চাষি মফিজুল ইসলাম। মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মিনারকোট, বড়-লৌহঘরসহ বিভিন্ন গ্রামে তার রয়েছে ১৬টি পুকুর। ঢলের পানিতে ভেসে গেছে তার ছোট-বড় ৫টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ।

শুধু জয়নাল আবেদীন, বাছির মিয়া ও মফিজুল ইসলামের পুকুরই নয়, আকস্মিক বন্যার পানিতে এবার এই উপজেলার সীমান্তবর্তী মনিয়ন্দ, মোগড়া ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ১০৯টি পুকুর তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, অতিবর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ায় হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ৩টি ইউনিয়নের ১০৯টি পুকুর তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ৮৭ মেট্রিক টন মাছ ও ৪ লাখ মাছের পোনা। এতে স্থানীয় মৎস্য চাষিদের এক কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সরেজমিনে গিয়ে মৎস্য চাষিদের দুর্দশার খবর জানা গেছে। পুকুর ও দীঘিতে বিনিয়োগ করা শ্রম-ঘাম, পুঁজি সবই বানের জলে তলিয়ে গিয়ে এখন অনেকের কাঁধে বইছে ঋণের বোঝা।

মৎস্য চাষি বাছির মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে তারা এবার আগাম কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। বানের জলের স্রোত এতটাই প্রবল ছিল যে, জাল দিয়ে ঘেরাও করেও পুকুরের মাছ আটকানো যায়নি। অনেক পুকুরের পাড়ও ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে সেখানকার অনেক মৎস্য চাষি এখন পুঁজি শূন্য হয়ে পড়েছেন।

তিনি আরও জানান, তার সবকটি পুকুরেই পুরনো মাছ মজুদ ছিল। গত শনিবার জাল ফেলে এসব মাছ ধরে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু সব মাছ ভেসে যাওয়ায় তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় এখন সরকারি সহায়তা না পেলে তাদেরকে পথে বসতে হবে।

স্থানীয় কর্নেল বাজারের মৎস্য খাদ্য ডিলার বাছির ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী মো. বাছির মিয়া বলেন, বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে আমরা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিনে মাছ চাষিদের কাছে তা বাকিতে বিক্রি করি। মাছ বড় করে বাজারজাত করার পর ওই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেন মাছ চাষিরা। কিন্তু এবার আকস্মিক বন্যায় মাছ চাষিরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হননি, আমরা মাছের খাদ্য সরবরাহকারীরাও একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

আখাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহান জানান, উপজেলার মৎস্য চাষিরা আকস্মিক বন্যার কারণে এবার ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। মৎস্য চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা সরকারি প্রণোদনার জন্য আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, আকস্মিক বন্যার পানিতে উপজেলার ৩ ইউনিয়নের মোট ৪০ হেক্টর ধানের জমি ও ৫ হেক্টর সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।‌

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

3h ago