আইন লঙ্ঘন করে সাজা দেওয়ার অভিযোগ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে

আইন লঙ্ঘন করে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩ জনকে সাজা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্য ডেইলি স্টারের নীতিমালার কারণে ছবিতে তাদের মুখ ব্লার করে দেওয়া হয়েছে।

মাদক রাখার অভিযোগে নাটোরে ৩ ছাত্রলীগ নেতাকে আইন লঙ্ঘন করে সাজা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে।

নাটোর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে বিচারকের সামনে অপরাধ উদঘাটিত বা সংঘটিত হলে সাজা দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনি খাতুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেই ওই ৩ জনকে সাজা দিয়েছেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন—নাটোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সাকিব, একই শাখার সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ। তাদেরকে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের কানাইখালী এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নাটোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগ।

সমাবেশে টিএমএসএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের বঙ্গজল ট্রমা সেন্টারের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন সাকিব, আশিক ও আবিদ। এ সময় গাঁজা সেবনের অভিযোগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের  এএসআই মো. আব্দুল মোমিন, সিপাই আশরাফুল ইসলাম হিমেল ও সিপাই মো. বিপ্লব হোসেন তাদেরকে আটক করেন।'

'পরে সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা যায়, দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ সদস্য ৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকে হাতকড়া পরান। এর ১০ মিনিট পর ১২টা ১৮ মিনিটে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা তাদের নিয়ে অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর তাদেরকে নেওয়া হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নাটোর অফিসে', তিনি বলেন।

'বিকেল ৩টার দিকে শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে হাজির করা হয় ৩ জনকে। এ সময় জোর করে সই নিয়ে ৩ জনকেই ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক এবং নাটোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রনি খাতুন। একই সময় অন্যান্য জায়গায় অভিযানে আটক হওয়া আরও ৩ জনকেও সাজা দেওয়া হয়', যোগ করেন আব্দুল্লাহ আল নোমান।

তিনি আরও বলেন, 'আইন অনুযায়ী, কোনো তফসিলভুক্ত অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের সামনে উদঘাটিত বা সংঘটিত হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিতে পারেন। অথচ ওই ৩ জনকে হাতকড়া পরানো থেকে শুরু করে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ১০ মিনিটে সিসিটিভি ফুটেজে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনি খাতুনকে দেখা যায়নি।'

নাটোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক দস্তগীর ইসলাম সজীব বলেন, 'সাকিব, আশিক ও আবিরকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। যখন সাকিব ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেন, তখনই তাদেরকে জোর করে অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ সদস্য।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, 'ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রনি খাতুন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় সব জায়গাতেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন।'

এ ছাড়া, অভিযানের সময় মাকদদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মো. তাইজুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. আফরাফুজ্জামান, সিপাই মো. বিপ্লব হোসেন, সিপাই আশরাফুল ইসলাম হিমেল ও সিপাই মিনহাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সেইসঙ্গে এসিল্যান্ডের গাড়িচালক, পেশকার ও পিয়নও উপস্থিত ছিলেন বলেন উল্লেখ করেন তিনি।

তবে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির বিষয়টি এড়িয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নাটোরের উপ-পরিদর্শক মো. তাইজুল ইসলাম বলেন, 'ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসামিদের ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় স্টেডিয়ামের সামনে। তার আগে আমাদের অফিসে নিয়ে কিছু লেখালেখি করা হয়।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক রনি খাতুন বলেন, 'কোনো বিধি লঙ্ঘন করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়নি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমার সঙ্গে ছিল। এএসআই প্রসিকিউসন দিয়েছেন এবং একজন হেরোইন সেবন ও ৫ জন গাঁজা রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ৫ জনকে ১৫ দিন করে জেল এবং একজনকে হেরোইন সেবনের দায়ে ২ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে।'

'৩টি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। কালুর মোড়, বঙ্গজল ও উত্তর চৌকিরপাড়। আড়াইটার দিক থেকে আমি মুভমেন্টের মধ্যে ছিলাম। আমি বঙ্গজল এলাকাতেও ছিলাম, কালুর মোড় এলাকাতেও ছিলাম ও উত্তর চৌকিরপাড় এলাকাতেও ছিলাম। অপরাধ আমার সামনেই উদঘাটিত হয়েছে এবং সংঘটিত হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

উপস্থিত থাকলে সিসিটিভির ফুটেজে আপনাকে দেখা যায়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রনি খাতুন বলেন, 'আমি সেখানে গাড়ি নিয়ে যাইনি। সিসিটিভি ফুটেজে আমাকে না-ও দেখা যেতে পারে। কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম।'

এদিকে, রনি খাতুন গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যাননি উল্লেখ করলেও মাকদদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মো. তাইজুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, এসিল্যান্ডের গাড়িচালক ঘটনাস্থলে ছিলেন।

এ ছাড়া, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুসারে, ঘটনাস্থলেই সাজা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তাদেরকে কেন পরে সাজা দেওয়া হলো জানতে চাইলে রনি খাতুন বলেন, 'বিচারের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের সামনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। আইনের কোনো লঙ্ঘন ঘটেনি।'

নাটোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ এর ৬ ধারা মতে, কোনো তফসিলভুক্ত অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের সামনে উদঘাটিত বা সংঘটিত হতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষ স্বীকার করতে হবে। যদি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের সামনে অপরাধ উদঘাটিত বা সংঘটিত না হয়, এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার না করলে সাজা দেওয়া হয়, তাহলেও আইন লঙ্ঘন করা হবে।'

জানতে চাইলে নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, 'যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ভঙ্গ করে, তবে আমার কাছে আপিল করার সুযোগ আছে। আপিল করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

4 years could be maximum one can go before election: Yunus tells Al Jazeera

Says govt's intention is to hold election as early as possible

1h ago