‘ঈশ্বরদীতে লিচুর বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েছে’

ঈশ্বরদীর নানা প্রজাতির লিচু নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

পাবনার ঈশ্বরদীর লিচুর খ্যাতি দেশব্যাপী। দেশেরে বাজারে বছরের প্রথম লিচু পাওয়া যায় ঈশ্বরদীর বাগান থেকে। এ কারণে এখানকার লিচুর দেশব্যাপী চাহিদা আছে।

উর্বর ভূমি আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পাবনার লিচু চাষিরা প্রতিবছর লাভবান হতে পারছেন। গত কয়েক বছরে ঈশ্বরদীতে লিচুর বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েছে।

ঈশ্বরদীর লিচু চাষিরা মনে করেন, এই লিচু তাদের জন্য গর্ব এবং প্রকৃতির আশীর্বাদ।

ঈশ্বরদীর নানা প্রজাতির লিচু নিয়ে এবার মেলার আয়োজন করেছেন চাষিরা। নিজেদের উৎপাদিত লিচুর সৌন্দর্য ও গুণগত মান দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতেই বাংলাদেশ কৃষক সোসাইটি ২ দিন ব্যাপী এ লিচু মেলার আয়োজন করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে ২ দিনব্যাপী এ লিচু মেলার উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

লিচু মেলায় লিচুর প্রদর্শনী। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'ঈশ্বরদীতে লিচু, বরই, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের উৎপাদন অনেক ভালো হয়। তাই ঈশ্বরদীতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার একটি উপযুক্ত স্থান। এ অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য যাতে শিল্প কলকারখানা স্থাপন করা যেতে পারে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে সরকার।'

কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমান সরকারের লক্ষ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা, যেন আমাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারে।'

বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলায় প্রায় অর্ধশত কৃষি প্রযুক্তির নানারকম স্টল বসেছে।

মেলার আয়োজক বাংলাদেশ কৃষক সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, 'ঈশ্বরদীতে লিচুর উৎপাদন বরাবরই ভালো হয়, মৌসুমের প্রথম দিকে ফলন পাওয়ায় কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে থাকেন। ভালো ফলন আর লাভ পাওয়ায় গত কয়েক দশক ধরে ঈশ্বরদীতে লিচুর বাণিজ্যিক উৎপাদন বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে দেশের একক লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে ঈশ্বরদীতেই সবচেয়ে বেশি লিচুর উৎপাদন হয়।'

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পাবনা জেলায় ৪ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে যা থেকে প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। এ থেকে প্রায় ৫ শতাধিক কোটি টাকা আয় হবে।'

কৃষিপণ্য দিয়ে পাবানার মানচিত্র। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

তিনি আরও বলেন, 'পাবনার মোট লিচুর প্রায় ৮০ শতাংশই ঈশ্বরদী উপজেলার বেলে মাটিতে উৎপাদিত হয়। ফলে ঈশ্বরদীর লিচু এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'

একসময় শুধু আটি লিচু আর কিছু বোম্বাই লিচুর আবাদ হলেও এখন হাইব্রিড প্রজাতির চায়না-৩ লিচুর আবাদে সফল হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ ছাড়াও চায়না-২, দেশি আটি লিচু, বোম্বাই লিচু, বেদানা লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির লিচুর ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে ঈশ্বরদীতে।

জাতীয় পদক প্রাপ্ত লিচু আবাদকারী সাজাহান আলী বাদশা বলেন, 'ঈশ্বরদীতে বিভিন্ন প্রজাতির অর্থকরী ফসলের বাণিজ্যিক আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েক দশকে ঈশ্বরদীর, লিচু, বরই, পেঁপে, কপিসহ নান ফল ও সবজি দেশের মোট উৎপাদিত চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে। কৃষি উৎপাদনে এ অঞ্চলের কৃষকরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, তাই এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে কৃষিকর্ম এখন গর্বের বিষয়।'

মেলায় কৃষি বিভাগের স্টলে পাবনার মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ফসল দিয়ে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে তৈরি কৃষি মানচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় জমান।

মেলায় কৃষি প্রকৌশলীরা ধান, চাল, ও মসুরের ডাল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এঁকেছেন।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনাতে উৎপাদিত কালো ধান ও সোনালী ধান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এ চিত্রকর্মটি আঁকেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।'

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

12h ago