পাবনা

‘ঘূর্ণিঝড়ে বাগানের প্রায় ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে’

পাবনা সদর উপজেলার আব্দুল হামিদ রোড, আওতাপারা, ছিলিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লিচু পানির দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ছবি: স্টার

এ বছর বাগানের প্রায় অর্ধশতাধিক গাছে লিচুর উৎপাদন করেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছিলিমপুর গ্রামের লিচু চাষী মো. শামীম হোসেন। অতি খরায় আগে থেকেই অনেক গাছের লিচু শুকিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করায় লিচুর আশানুরুপ দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। তার ওপর সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বাগানের প্রায় প্রতিটি ফলজ গাছই ক্ষতির শিকার হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে বাগানের ফলজ লিচু গাছের বেশিরভাগ লিচু ঝরে পড়ায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

'এক সপ্তাহ আগে থেকে লিচু পারা শুরু করেছি। ঝড়ের সময় অর্ধেকের বেশি লিচু গাছেই ছিল। ঝড়ের কবলে প্রতিটি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে,' শামীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন।

তিনি আরও জানান, ঝরে পরা লিচুর বেশিরভাগই ফেটে গেছে। ফলে বাজারে এসব লিচুর চাহিদা নেই। প্রায় ১০ মণ লিচু কুড়িয়ে মাত্র ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে।

'লাভ তো দূরের কথা। এখন উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েই আমি দুশ্চিন্তিত', বলেন তিনি।

একই কথা জানান আওতাপারা এলাকার লিচু চাষী আব্দুল আলিম। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ মণ লিচু বাজারে নিয়ে এসে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

আলীম বলেন, 'দুই টাকা দরে বাগান থেকে লিচু কিনে এখন একটি লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৫০ পয়সা দরে। ফলে লিচুর ব্যবসা করে এবার আর লাভের মুখ দেখা যাবে না।'

মঙ্গলবার পাবনা সদর উপজেলার আব্দুল হামিদ রোড, আওতাপারা, ছিলিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে ক্ষতিগ্রস্ত লিচু পানির দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে লিচু পাওয়ায় বাজারে ভিড় করেছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, 'এ বছর পাবনায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করে ৫০ হাজার মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈরি আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলনের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হলেও বাগানে আশানুরুপ লিচুর উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু ঝড়ের কবলে পরে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।'

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক ও বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির উপদেষ্টা কৃষক শাজাহান আলী বাদশা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত কয়েক বছর ধরেই ঈশ্বরদীতে বাম্পার লিচুর উৎপাদন হয়ে আসছে। তবে এ বছর লিচু চাষীরা প্রাকৃতিক বৈরীতার শিকার হয়ে লোকসানের মুখে পড়েছে।

বাদশা বলেন, '৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় লিচুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ বছর লিচুর উৎপাদনের সময়ে (গ্রীষ্মকাল) বেশিরভাগ দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে ছিল। ফলে বাগানের প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচু কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

'ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি লিচু পারা হয়ে গেছে, গাছে যে পরিমাণ লিচু অবশিষ্ট রয়েছে তার প্রায় ২৫ শতাংশই ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে প্রায় বাগানের বেশিরভাগ লিচু গাছই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফলে লিচু উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, এ অবস্থায় এমনকি লিচুর উৎপাদন খরচ উঠবে কি না এ নিয়েও আশঙ্কা করছেন লিচু চাষীরা। 

'কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ওপর কারো হাত নেই। তাই কৃষকদের এই লোকসান মাথা পেতে নিতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'State intelligence agency' is attempting to form political party, Rizvi alleges

Doubts are growing as to whether there are subtle efforts within the government to weaken and break the BNP, he also said

1h ago