বাতাস থেকে খাবার পানি সংগ্রহের যত চেষ্টা

বিশ্বজুড়েই বিশুদ্ধ পানির সংকট দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে। পৃথিবীতে ৭০ ভাগ পানি থাকলেও বিশুদ্ধ পানি আছে মাত্র ৩ শতাংশ। যার দুই তৃতীয়াংশ আবার আটকা পড়ে আছে বরফে।

বৈশ্বিকভাবে বিশুদ্ধ পানি বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা প্রায় একশ এক কোটি। প্রায় দুইশ ৭ কোটি মানুষ বছরে অন্তত এক মাস পানির সংকটে ভোগেন।

অন্যদিকে, ইউনিসেফের ভাষ্যমতে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭০০ জন শিশুর দৈনিক মৃত্যু ঘটে পানির অভাবজনিত ডায়রিয়ার কারণে।

এমন পরিস্থিতিতে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানী, গবেষক, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ, বিশুদ্ধ খাবার পানির বিকল্প উৎস বের করতে। তারই অংশ হিসাবে দেখা মিলছে বাতাস থেকে খাবার পানি তৈরির নানাবিধ প্রচেষ্টার। 

ভারতের ওয়াটারমেকার কোম্পানি

ভারতে ২০০৫ সালে ওয়াটারমেকার নামের একটা কোম্পানি বাতাস থেকে খাবার পানি তৈরি করতে এক প্রযুক্তির আশ্রয় নেয়। সেই প্রযুক্তির ভিত্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত মেশিনের মাধ্যমে ভেজা বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করা। সংগৃহীত আর্দ্রতাকে পরবর্তীতে ঠাণ্ডা করে জলকণায় রূপান্তর করা হয়। সবশেষ পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা থেকে সৃষ্টি করা হয় বিশুদ্ধ খাবার পানি। ওয়াটারমেকারের ১২০ লিটার থেকে ২ হাজার ৫০০ লিটারের বিভিন্ন আকৃতির যন্ত্র রয়েছে অর্থাৎ যেগুলোর মাধ্যমে দৈনিক ১২০ থেকে ২ হাজার ৫০০ লিটার পানি উৎপাদন সম্ভব। তাদের এই মেশিন ভারতের বিভিন্ন ঘর, স্কুল, ক্লিনিকে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রকৌশলী এনরিখ ভেইগারের উদ্ভাবন

শুষ্ক এলাকা এবং শরণার্থী শিবিরে খাবার পানি যোগান দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে স্প্যানিশ প্রকৌশলী এনরিখ ভেইগার উদ্ভাবন করেছেন বাতাস থেকে খাবার পানি তৈরির একটা যন্ত্র। তার উদ্ভাবিত সেই যন্ত্র বাতাসে যতক্ষণ না পর্যন্ত হিমায়িত হয়ে পানিতে রূপান্তর হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে থাকে। একই পদ্ধতি শীততাপনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তবে ভেইগারের প্রযুক্তির সুবিধা হচ্ছে কম আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রায় এর চমৎকার কার্যকারিতা। তার উদ্ভাবিত মেশিন ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট) এবং মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশের আর্দ্রতাও সংগ্রহ করে নিতে পারে। উল্লেখ্য যে তার তৈরি মেশিন নামিবিয়ার কিছু স্থানে এবং লেবাননের শরণার্থী শিবিরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনে অবস্থিত টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে তাদের তৈরি এক ধরনের থকথকে আঠালো ফিল্ম বাতাস থেকে পানি বের করে আনতে সক্ষম। তাদের ভাষ্যমতে, নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এক দিকে যেমন খুবই স্বল্প খরচের। অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যন্ত শুষ্ক বাতাস থেকেও পানি বের করে আনা সম্ভব।

গবেষক দলের উদ্ভাবিত থকথকে আঠালো ফিল্মটি মূলত দুইটি উপাদান দ্বারা তৈরি। প্রথমটি সেলুলোজ আর দ্বিতীয় উপাদানটি নাম ওলকচু! এই দুই উপাদান এক করে তারা একটা জেল ফিল্ম তৈরি করে যা বাতাস থেকে পানি শোষণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিঃসরণ করার সক্ষমতা রাখে। চমৎকার দিক হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়ায় শক্তির ব্যবহার লাগে খুবই কম।

উক্ত প্রক্রিয়ার প্রথম অংশ হচ্ছে ওলকচু থেকে বানানো আঠায় থাকা ছোট ছোট অসংখ্য ছিদ্রের বাতাস থেকে জলকণা নিজেদের শরীরে জড়ো করা। আর পরবর্তী অংশের কাজ হচ্ছে, সামান্য তাপের সহায়তায় সেলুলোজকে হাইড্রোফোবিক বা পানির প্রতি এর বিকর্ষণ প্রবণতা জাগিয়ে তোলা। যাতে করে সেলুলোজ আঠার ছিদ্রে জমে থাকা জলকণা বের করে দেয়। 

তাদের উদ্ভাবিত সেলুলোজ-ওলকচুর জেল বানানোও বেশ সহজ। শুধুমাত্র এই দুই উপাদানকে একত্র করে ছাঁচে দুই মিনিটে রেখে দিতে হয়। এরপর একে শুধুমাত্র হিমাঙ্ক তাপমাত্রায় শুষ্ক করেই কাজে লাগানো যায়। উল্লেখ্য যে, সাশ্রয়ী মূল্যের উক্ত জেল ফিল্মকে যেকোনো আকৃতি দেওয়া সম্ভব।

পরীক্ষায় টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্ভাবিত জেল ফিল্মকে বেশ কার্যকরী হিসাবেই পাওয়া গেছে। ৩০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায়, প্রতি কেজি জেল বাতাস থেকে এক দিনে প্রায় ১৩ লিটার পানি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এমনকি বাতাসের আর্দ্রতা যখন মাত্র ১৫ শতাংশে নেমে এসেছিল এবং যা মরুভূমির বাতাসের জন্যও অনেক কম আর্দ্রতা, সেই পরিস্থিতিতেও উক্ত জেল এক দিনে ৬ লিটারের বেশি পানি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

35m ago